সাহিত্য ওয়েবজিন ৯ নাম্বার বাস-এ Queer Art বিষয়ে একখানা রচনা পাঠ করছিলাম। রচয়িতার নাম সৌরভ রায়। দৃশ্যমাধ্যম নিয়া গবেষণা করেন। ছবি আঁকাআঁকির সঙ্গেও বোধহয় সংযুক্ত। হঠাৎ মনে হইল, মাওলানা ভাসানির পালনবাদ সঙ্গী করে জাতির সামনে হাজির জনাব মাহফুজ আব্দুল্লাহ আর মোল্লা সমাজের নয়নমণি দার্শনিক আসিফ মাহতাবের বাংলাদেশে সৌরভ রায় বিরচিত কুইয়ারনামার ফিরতি পাঠ মন্দ হবে না। পালনবাদ-এ অটল জনাব মাহফুজ আর ইসলামি নৈতিকতার মহান পাবন্দ জনাব আসিফ মাহতাব আমাদের জন্য যে-পরিসর স্থির করে দিতেছেন, সেখানে বেচারা সৌরভ রায় বিরচিতি রচনাটির কোনো জায়গা আছে কি? আজকের আলাপে তার কিছু খোঁজ করি নাহয়।
সৌরভের রচনায় Queer Art-এর বিশেষত্ব কিছুটা পাইতেছি বটে! LGBTQ নামে ছাতার নিচে যেসব মানুষকে সমাজ একত্র করলেন, সেখানে কুইয়ারকে একটি গোত্র বা দল গণ্য করা যাইতে পারে। মানবগ্রহে নারী ও পুরুষের সমাজ স্বীকৃত স্বাভাবিক যৌনসম্পর্কের বাইরে যারা অবস্থান করেন, তাদেরকে এখন আমরা LGBTQ বইলা সংজ্ঞায়িত করছি। নারী সমকামী, পুরুষ সমকামী, উভকামী ও দ্বৈতলিঙ্গধারী হিজড়াদের সঙ্গে কুইয়ারকে উক্ত গোত্রে ঠেলে দিছি আমরা।
বর্গীকরণটা এভাবে কেন করতেছি? প্রশ্নের উত্তর জটিল নয়। নারী ও পুরুষের যৌনসম্পর্ককে কেন্দ্র করে আমাদের মনোজগতে সক্রিয় ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ নৈতিক নানা শুচিবায় সেখানে ভূমিকা নিভাইতেছে। LGBTQ-এর নিচে সমবেত লোকজনকে আনফিট বইলা আমরা ধরে নিতেছি। বর্গীকরণের মাধ্যমে তাদের থেকে নিজেকে পৃথক করা যার মূল উদ্দেশ্য। বর্গীকরণ করে খুব ভালো কাজ করছি সেইটা কিন্তু বলা যাইতেছে না। যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্য বা প্রবণতাকে আমরা স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যসম্মত বইলা মানি, LGBTQ সেখানে খাপ খায় না। কেন খায় না তার কার্যকারণ তালাশ করার পরিবর্তে আমরা সোজা বর্গীকরণে চলে গেছি। এর ফলে একটি মানুষ কেন সমকামী বা উভকামী ইত্যাদি ফ্যাক্টচেকিং আর সহজ থাকে নাই। আমরা সেখানে দেয়াল তুলে দিছি। এখন এই দেয়াল পেরিয়ে ফ্যাক্ট চেকিংয়ে যাওয়া মাত্র সমাজে ছি-ছিক্কার ওঠে। পালনবাদের বাংলাদেশে যার সাক্ষী কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত হইতেছি ইদানীং।
হিন্দু ধর্মে যেমন উঁচা জাতের লোকজন নিচু জাতকে অস্পৃশ্য-অচ্ছুত বইলা চিহ্নিত করে, তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে, প্রয়োজনে মাইর ও দৌড়ের উপ্রে রাখতে মরিয়া হয়… LGBTQ-র অবস্থা মোটামুটি সেরকম। একদল তাদের ওপর ভীষণ খাপ্পা। অন্যদল তাদের পক্ষ নিয়া কোঁদলে লিপ্ত। দুই পক্ষের চিপায় পতিত LGBTQ ওদিকে বিপ্রতীপ সংস্কৃতি বা কাউন্টার কালচারের প্রতীক রূপে নিজেকে গণ্য করতেছেন। Queer Art-এ প্রতিফলিত জগতের এটি হইতেছে সারকথা।
LGBTQ ছাতায় সমবেত মানব-মানবী আটশো কোটি মানুষে গিজগিজ গ্রহে সংখ্যালঘুর সংখ্যালঘু। সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে তারা তথাপি অস্বস্তিকর। বিশ্বসমাজ তাদেরকে পৃথক কমিউনিটি বা সম্প্রদায় ভাবতে বাধ্য করছেন। এর বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় LGBTQ ক্রমশ বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড়ো সংগঠন ইসকনের মতো নিজেকে বিপন্ন বইলা ভাবেন। যেসব শারীরিক ও সামাজিক চাপে মানব প্রজাতির মধ্যে কিছু লোক সমলিঙ্গে আকৃষ্ট হয়, কিছু আবার উভলিঙ্গের প্রতি টান বোধ করে, এবং তার মধ্যে হিজড়া হিসেবে চিহ্নিত যেসব লোক তার দেহে নারী ও পুরুষের দ্বৈত লক্ষণ বহনের কারণে নিজের যৌনসত্তাকে ডিফাইন করতে সমস্যায় পড়েন,- এখন তাদের এসব সমস্যাকে ব্যাধি ও বিকৃতি দাগিয়ে পরিস্থিতি আমরাই যথেষ্ট জটিল করে তুলছি ইতোমধ্যে। আমাদের এই বর্গীকরণের ফলে জেন্ডার পলিটিক্সে অবিরত নতুন উৎপাত যোগ হইতেছে। সৌরভের রচনায় যার আভাস আমরা পাইতেছি।
LGBTQ-র নিচে সমবেতরা এখান হইতে নিজেকে অরক্ষিত, আক্রান্ত, বিপন্ন, ঘৃণিত বইলা ঠাউরে নিছেন। প্রতিক্রিয়া হিসেবে অগত্যা দুটি জিনিস বর্তমানে দৃশ্যমান। প্রথমটা হইতেছে বাণিজ্য। বিশ্ব জুড়ে LGBTQ এখন দামি পণ্য। আমরা তাদের অস্বাভাবিক ভাবি। অনেকে ঘৃণা করি। চটিসাহিত্যের মতো নিষিদ্ধ ভাবার কারণে তাদের ব্যাপারে আমাদের মনে অজানা ভয় ও নিষিদ্ধ কৌতূহল কাজ করে। ভয় আমরা নিজে তৈরি করছি আগে। অন্যদিকে এখন সেই ভয়কে নিষিদ্ধ কৌতূহল মিটানোর খেলনা বইলা সাব্যস্তও করতেছি! আমাদের এই আজব বয়ান তৈরির খেলার উপকরণ হিসেবে কাজেই LGBTQ রীতিমতো একখানা পণ্য রূপে বাজারে উঠতেছেন প্রতিদিন।
পশ্চিম গোলার্ধের বিগ বসরা এভাবে LGBTQ-র মার্কেট ভ্যালু পয়দা করে বসছেন। বিগত দেড়-দুই দশক ধরে তাদেরকে নিয়া প্রচুর চলচ্চিত্রসহ রকমারি সাংস্কৃতিক পণ্য উৎপাদিত এবং বাজারের বিপণন করা হইতেছে। ক্রেতা এখানে কারা? মার্ক করলে দেখা যাইতেছে, LGBTQ কমিউনিটি কিন্তু এসব পণ্যের ক্রেতা নয় সেভাবে। আমরা যারা তাদেরকে বর্গীকরণে ভাগ করে নিছি, সেই তারাই হইতেছি আসল ক্রেতা! ঘটনাটি হাস্যকর হইলেও নির্মম সত্য।
বর্গীকরণের মধ্য দিয়া দ্বিতীয় যে-কাজ আমরা করছি সেইটা হলো LGBTQ-কে রাজনীতির গুঁটি রূপে ব্যবহার যাইাতেছি সদা। এমন এক গুঁটি যাকে ইসকনের মতো প্রয়োজন বুঝে ব্যবহার ও কাজ শেষ হলে ছুড়ে ফেলা যায়। এখান থেকে কাউন্টার কালচারে গমন করতে তারা বাধ্য বোধ করতেছেন। Queer Art প্রকৃতপক্ষে এর বাহক। সৌরভ রায় তাঁর ভূমিকাধর্মী নিবন্ধে বিষয়টি নিয়া বিস্তারিত আলাপ করছেন। Queer Art-কে তাত্ত্বিক ও দার্শনিক স্পেস থেকে ব্যাখ্যায় কুশলী রেনেট লরেঞ্জ বিরচিত Queer Art: A Freak Theory বইয়ের সারবস্তুও সেই সুবাদে উনার লেখায় আসছে। বইখানাকে রেনেট ও তাঁর সহশিল্পী পলিন বাদিউর শৈল্পিক অভিজ্ঞান বিষয়ক ভাবনা ও ইশতেহার বলা যাইতে পারে।
রেনেট লরেঞ্জ একাধারে বিজ্ঞানী, শিল্পী ও গবেষক। Queer Art কার দোষে খামখেয়ালি বা পাগলামির মধ্য দিয়া সমাজসৃষ্ট টাবুকে আঘাত হানতে মজবুর হয়, বইয়ে সেই পটভূমি তুলে ধরছেন। তিনি ও পলিনসহ অন্য কুইয়ার শিল্পীরা যেসব কাজবাজ করছেন, সেখানে ছিটলামি বা এসবের মধ্য দিয়া সমাজস্বীকৃত মিথকে কমিক প্রতিপন্ন করা ছাড়াও বীভৎসতাকে বৈধতা দানের প্রবণতা চোখে পড়বে।
মিশেল ফুকো সংগতকারণে রেনেটের বইয়ে জায়গা করে নিছেন। কারাগার, হাসপাতাল, বিদ্যালয়ের মতো সমাজস্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলাকে সামাজিক অবরুদ্ধতা ও টাবু তৈরির উপকরণ হিসেবে ফুকো চিহ্নিত করছিলেন। ক্ষমতা কীভাবে নিজেকে সক্রিয় করে, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনকে সামনে নিয়া আসার মাধ্যমে মানুষকে ভেড়ার পালের ন্যায় শিকলবন্দি ও সত্তাহীন নিয়মের অনুগত সেবকে পরিণত করে ইত্যাদির ফুকোবর্ণিত ব্যাখ্যা Freak Theory ওরফে ছিটলামিতত্ত্বে গুরুত্ব সহকারে আমলে নিছেন রেনেট লরেঞ্জ। সৌরভ তার লেখায় গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটি উদ্ধৃত করছেন বৈকি। সমাজে যত বেশি বর্গীকরণ ঘটে বা এই সুবাদে অজস্র বয়ান ও আর্ট তৈরি হয়, এখন এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেব পাল্টা বয়ানের জন্ম অমোঘ হইতে থাকে। বর্গীকরণের ভিকটিম কাজেই পাল্টা বয়ান ও প্রতিশিল্প পয়দায় নিজেকে সক্রিয় করে। বিশ্বজুড়ে LGBTQ মুভমেন্টকে ঘিরে সৃষ্ট সাম্প্রতিক তৎপরতায় আমরা যার নমুনা হামেশা দেখতেছি।
সে যাই হোক, মনে-মনে ভাবি,- LGBTQ-র ছাতার নিচে কুইয়ারকে সমাজবিজ্ঞানীরা রাখলেন বটে, কিন্তু সে স্বয়ং সেখানে এর পুরোটা একলা ধারণ করে। সে হইতেছে এমন লোক যে কিনা নিজের যৌনঅস্তিত্বের ব্যাপারে ঘোরতর সন্দিহান। এখান থেকে একজন কুইয়ারের ঝামেলা শুরু হয়। উভকামী, নারী বা পুরুষ সমকামী অথবা হিজড়ার মতো দ্বৈত যৌনসত্তায় নিজের আত্মপরিচয় নিয়া সে পেরেশান হইতে থাকে। তার মনে তখন এমনসব ফ্যান্টাসি প্রকট হয়, বাস্তবতাকে ইগনোর যাইতে সেগুলাকে সে প্রয়োগ করে। সৌরভ তাঁর রচনায় যেসব আর্টপিস সংযুক্ত করছেন, সেগুলো যদি ভালোভাবে আমলে নেই তাহলে বিষয়টি আমরা ধরতে পারব। আমার ধারণা,- সামনে যে-যুগ আসতেছে সেখানে LGBTQ বইলা কোনো ছাতার অস্তিত্ব থাকবে না। পুরোটাকে কুইয়ার নামক ছাতার নিচে সমাজবিজ্ঞানীরা গোনায় ধরতে বাধ্য হবেন। উনাদের বর্গীকরণে অনেককিছু এখনো মিসিং।
সামনের পৃথিবীতে দলছুট মানুষগুলোকে কেন LGBTQ ফ্রেমে কয়েনাইজ করা যাবে না তার কারণটা এবার ঝেড়ে কাশি। বিশ্ব জুড়ে কিছু মানুষ আছেন যারা যৌনতা পছন্দ করে না। যৌনমিলনে ঘোর বিতৃষ্ণা বোধ করে। মানে এই নয়, তাদের যৌনক্ষমতা নাই। পুরোমাত্রায় আছে, কিন্তু দৈহিক স্পর্শ ও সেখান থেকে অ্যাড্রিনালের জাগরণ ঘটার কারণে মানুষ যেভাবে মিলন করে, অর্গাজম বা স্খলন হয়… এর কিছুই যৌনমিলনে বিতৃষ্ণ লোকজন অনুভব করে না। বলা ভালো,- অনুভব করতে চায় না। যৌনতায় সাড়া দিতে মস্তিষ্ককে অনিচ্ছুক রাখে তারা। স্পর্শের মধ্য দিয়া যৌনতার সুখ নিতে তাদের মস্তিষ্ক সাড়া প্রদানে বিরত থাকে। রোমানিয়া দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা আদিনা পিনতিলির (Adina Pintilie) Touch me not ছবিখানা যারা দেখছেন তারা প্রব্লেমটি ভালো ধরতে পারবেন। স্পর্শের মাধ্যমে অনুভূতির অকল্পনীয় জাগরণের সমস্যায় আক্রান্তরা এক্ষেত্রে কুইয়ারে পড়তেছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বড়ো তরঙ্গ সামনে আরো আসবে। মানব ও মানবপ্রায় অনুভূতি ধারণে সক্ষম যন্ত্রমানবের মধ্যে রোমান্সের বিষয়টি নিয়া পশ্চিম গোলার্ধে যে-কারণে আলাপের পরিধি ব্যাপক। যৌনঅস্তিত্বের জায়গা হইতে এইটা বিপজ্জনক মেরুকরণ। পালনবাদ ওরফে পালংবাদের বাংলাদেশে বসে যার তাপ আমরা টের পাইতেছি না। মোটের ওপর আধা মানব ও অধা জন্তু রূপে জীবন কাটাইতে আমরা অভ্যস্ত। আমাদের জন্য ট্রান্সহিউম্যাননিজম বস্তুখানা বুঝের বাইরে আছে এখনো। একটি রোবট দেখতে মাইয়ার সঙ্গে রক্তমাংসের ছেলে সেক্স করতেছে;- ঘটনাটি আমাদের কাছে ঘৃণ্য বা ইবলিশি ব্যাপার হইলেও এরকম বাস্তবতা হইতে মানবগ্রহ বেশি দূরবর্তী নয়। যারা এর গভীরতা টের পাইতে আগ্রহী তারা স্পাইক জোনিজর Her মুভিখানায় ঘুরান দিয়া আসতে পারেন। উপভোগ্য ও সুনির্মিত ছবি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী সেলফোনমানবীর সঙ্গে এক রক্তমাংসের মানব সন্তানের রোমান্সঘন পটভূমি ছবিতে তুলে ধরছিলেন পরিচালক। বিষয়টি ছবিতে যেভাবে উপস্থাপন করা হইছিল তাতে মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়া আমরা ভাবনা করতে বাধ্য।
অন্যদিকে নানা প্রকারের ফেটিশদের খবর আমরা যৎকিঞ্চিৎ জানি। ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা ত্রুফো উনার ছবিতে নারী পদযুগলের প্রতি মোহগ্রস্ত এক লোকের কাহিনি তুলে ধরছিলেন। এতদিন জৈব উপকরণে মোহগ্রস্ত ফেটিশদের গল্প আমরা শুনছি। যেমন, নারীবক্ষে ফেটিশ। নারীনিতম্বের প্রতি ফেটিশ। নারীর অন্তর্বাস বা এরকম সামগ্রীর জন্য ফেটিশ… ইত্যাদি। ধাতব বা মেটালিক জাতীয় বস্তুর প্রতি যৌনফেটিশ এখন সামনে আসতেছেন। বডিহরর ঘরানার ফরাসি ছবি Titane যার আভাস দিতেছে।
ছবির নায়িকা গাড়ি দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়। তার মস্তিষ্কের খোলে টিটানিয়াম (titanium) জাতীয় ধাতব উপাদান চিকিৎসকরা তখন বাধ্য হয়ে ব্যবহার করেন। ধাতব উপাদানের প্রভাবে নায়িকার মস্তিষ্কে মেটালফেটিশ বৃদ্ধি পাইতে থাকে। পরিণামে এক বিশৃঙ্খল জগতে গিয়া পড়ে সে। তার আচার-আচরণ ক্রমশ রুক্ষ আর আধিভৌতিক হইতে থাকে। কলিগের সঙ্গে যৌনমিলনের ক্ষণে যোনিদেশ হইতে গাড়ি চালানোয় ব্যবহৃত তেল নিঃসরণ হইতে দেখে সে। নিজের দেহ কাঁটাছেড়া করে নিদারুণ। নানারকম কাবঝাবে অস্থির নায়িকা তার প্রিয় ক্যাডিলাক গাড়ির সঙ্গে একপর্যায়ে রমণে লিপ্ত হয়। ছবির পুরাটাই ভৌতিক ফ্যান্টাসি মনে হইতে পারে, কিন্তু স্মরণ রাখা প্রয়োজন মহাভারত-এ গান্ধারীও মূষল প্রসব করছিলেন। যেইটা জলে ভিজাইয়া রাখার সুবাদে উনার শত ছানাপোণা জন্ম নিছিল।
এখন এইটা নিছক আষাঢ়ে গল্প নাকি অন্য অর্থ বহন করে সে,- এসব নিয়া প্রশ্ন বরাবর ছিল। যে-কারণে Titane-এ যেইটা নিছক ফ্যান্টাসি, আসন্ন আগামীতে এই টাইপের সমস্যায় মানব-মানবীর পতিত হওয়া বিচিত্র নয়। তার যৌনঅস্তিত্ব তখন কি দিয়া বুঝব আমরা? সেখানে ওই কুইয়ারে সমাজবিজ্ঞানীরা তাকে বর্গীকরণ করবেন। এগুলো আমাদের সাহিত্য, শিল্পের ভাষা ও বয়ানকে প্রভাবিত করবে। বিচিত্র নৈতিক দ্বন্দ্ব আর পাল্টা ও প্রতিরোধী সাংস্কৃতিক আন্দোলন অমোঘ হবে সামনে। এসব জায়গা থেকে সৌরভের ভূমিকাধর্মী রচনা গুরুত্ব রাখে। কোটেশন জর্জরিত করে না লিখলে আরো ভালো হইত, তথাপি আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।
. . .
. . .