বিবিধ ও বিচিত্র

বেশরিয়ত জামানার গোলাপসুন্দরীগণ

Afghan Women before Islamic Revolution – Period 50s To 70s; Source – The Ultanta

মুমিন মুসলমানে ঘেরাও দেশ-বিদেশে মুসলমান মাইয়াদের মাঝেমধ্যে দেখি আর মনে-মনে তব্দা যাই! সময়ের সঙ্গে উনারা কদম আগে বাড়াইলেন না পিছন ফিরে হাঁটতেছেন সেইটা এখন আর মাথায় ঢোকে না! সংযুক্ত চিত্রমালিকায় পয়লা দুইখান আফগানদেশি কন্যাগো ছবি। গেল শতাব্দীর পঞ্চাশ হইতে সত্তর দশক অবধি জারি থাকা কাবুল শহর। তালেবানরা তখনো কারাকোরাম পর্বতমালায় আচ্ছাদিত দেশটার দুর্গম খাড়াইর ভিত্রে নিদ যাইতেছেন। বেরিয়ে আসার সময় নজদিক হয় নাই। সোভিয়েতরা দেশটির সঙ্গে বিবাদে জড়ায় তার পরের দশকে। বিপত্তি তখন থেকে আর ঠেকানো যায় নাই। মার্কিন হোয়াইটম্যানদের হাতে পরে যেটি নাটকীয় পূর্ণতা লাভ করছে ক্রমশ।

সার্চ ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়া ওসামা বিন লাদেন দেশটির সংকীর্ণ উপত্যকায় প্রবেশ যাওয়ার দিন থেকে আফগানিস্তান অন্য দেশ! এই আফগানিস্তান আর সেই দেশ নাই যার মিঠি-মিঠি রসমাখা বিবরণ আমরা সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে-এ একসময় পাঠ করছি। আফগান মাইয়ারা কভু ষাট-সত্তর দশকের কাবুল শহরে ফেরত যাইতে পারেন নাই। হোয়াইটম্যানদের পুতুল সরকার হামিদ কারজাইয়ের সময়ও না। তখন তারা তুলানামূলক স্বাধীন ছিলেন, কিন্তু তার সঙ্গে সত্তর দশকে কাবুল শহরের রাস্তা দিয়া উচ্ছল কদমে আগুয়ান কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া মুক্তবিহঙ্গদের তুলনা চলে না।

Women’s Rights – Afghanistan’s Golden Age; Source – India Today YTC

স্কার্ট পরিহিত কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া মাইয়ারা দূর পঞ্চাশ, ষাট অথবা সত্তর দশকের কালসীমায় সংখ্যায় কম হইলেও কাবুল শহরের অলিগলিতে বেআব্রু চলাফেরা করতেন। এর জন্য তাদের উপ্রে মাতব্বরির ভাবনা সমাজে তখনো গেড়ে বসে নাই। সে-কাবুল আর নাই বাহে! না আছে ওইসব আফগান, যাদের রসে চুবচুব বিবরণ সৈয়দ মুজতবা আলী বর্ণনা করছিলেন একদিন!

. . .

Women in Iran before Islamic Revolution Period 50s To 70s; Source – rarehistoricalphotos & daily mail

ওপরের ছবি দুইখান ইরানি রূপসীদের। খোমেনি জামানা তখনো আসেনি। স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকে ইসলামি জামানা শুরু হইতে খানিক বিলম্ব হইতেছে। সাগরতটে বিকিনি পরিহিত সম্ভ্রান্ত নারীগণ কাজেই নির্ভয়া। আরামসে রোদ পোহাইতেছেন। গাড়িতে ঠেস দিয়া বেশরম পোজ দিতেছেন দেদার। নিচে আরো দুইখানা ছবি সংযুক্ত করতেছি। এই দুইখান ছবিকে প্রাচীন সভ্যতার খনি ইরানে যুগ-যুগ ধরে বহমান সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের প্রতীক গণ্য করা যাইতে পারে। মডার্ন আউটফিট পরিহিত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নারীর সঙ্গে বোরখা পরিহিতরাও সেই সমাজে সমান স্বচ্ছন্দ বিরাজ করতেন ওইসময়। কেউ কাউকে হুদাই টিজ করার প্রয়োজন পড়েনি। দ্যায়ার ওয়াজ নো নিড ফর অ্যানি মোরাল পুলিশিং ইন দ্যাট টাইম।

Women in Iran before Islamic Revolution Period 50s To 70s – Tehran University; Source – rarehistoricalphotos

সাগরতটে বিকিনি পরিহিত বসরাই আর ইসফাহানের গোলাপসুন্দরীরা কভু কি ভাবতে পারছিলেন, এমন দিন আসবে, তাদের মেয়ের মেয়েরা বোরখা ও হিজাব ছাড়া ঘর থেকে বাহির হইতে পারবে না। বাহির হইলে চোখের পালকে হাজির হবে পুলিশ! কৈফিয়ত চাইবে। প্রয়োজনে প্রহার! জানতেন তো না, এভাবে একদিন মাশা আমিনিকে সঠিক নিয়মে হিজাব না পড়ার কারণে তলব করবে রাষ্ট্র। নৈতিকতার পাহারাদার পুলিশ তারে বেধড়ক পিটাবে। চোখের পলকে লাশ হবেন মাশা আমিনি। লক্ষ মানুষ রাস্তায় নামার পরেও সরকারকে গদি থেকে নামাতে পারবে না। ইরানের মেয়েরা তো খোমেনিযুগ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিবাদে বারবার রাস্তা কাঁপাইছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় নাই। মাশা আমিনির আত্মবলিদানের পরে কী ছবি পালাটাইছে। সেভাবে কিন্তু কিছু বদলায় নাই। যা হইছে সেইটা ওই শাক দিয়া মাছ ঢাকার মতো বলা যাইতে পারে।

Mahsa Amini: A year on from death – did protests change Iran? Source – Channel 4 News

ইরানি নারীদের মনোজগৎও লম্বা সময়ে বদলাইছে অনেকটা। চাপানো শরিয়তকে উনাদের একাংশ এখন সঠিক বইলা মনে করেন। যুক্তি ইচ্ছা করলে সবতাতে খুঁজে পাওয়া যায়। শাহ জামানায় রাষ্ট্র পরিচালনায় বিবিধ অদক্ষতা ও দুর্নীতি ছিল তার পতনের বড়ো কারণ। পশ্চিমের ইন্ধনও হয়তো রাজনৈতিক স্বার্থের জায়গা থেকে ছিল। কিন্তু মোটের ওপর ইরান তখন পারস্যে ঐতিহ্যে গরীয়ান সংস্কৃতির সঙ্গে বৈশ্বিক সংস্কৃতির সংযোগ ধরে রাখছিল। খোমেনিযুগ চালু হওয়ার দিন থেকে যার সবটাই একপেশে বয়ানে অবরুদ্ধ। বসরাই গোলাপদের ভাগ্যে সহসা মুক্তির পথ খোলা নাই। সরকারের সেন্সর ফাঁকি দিয়া দারুণ সব ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়া বিকল্প ভবিষ্যৎ দেখা যাইতেছে না আপাতত!

. . .

Women in Pakistan before the rise of Islamic Influence Period 70s; Source – The Dawn

সংযুক্ত ছবি দুইখান পাকিস্তানের বিখ্যাত সংবাদপত্র দ্য ডন-এর The ‘swinging seventies’ in Pakistan: An urban history প্রতিবেদন হইতে সংগৃহীত। ছবিগুলা সত্তর দশকের সেই বিক্ষুব্ধ সময়ের কাহিনি বলতেছে, যখন পূর্ব পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাইতেছিল। অন্যদিকে একই সময়রেখায় পশ্চিম পাকিস্তানে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত সহপাঠীরা বিটলস আর বেলবটমে ছিলেন অবিচ্ছেদ্য। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামনে কদম বাড়ানোর বাসনা পোষণ করতেন পাকি নারীকুল। যখন ক্যাম্পাসের বাইরে মডেলদের মতো পোজ দিতে মন চাইলে কেউ তেড়ে আসত না।

ডন এইটাও জানাইতেছেন, পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে ফ্যাশন আর মডেলিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে মরিয়া ছিলেন সরকার। ভুট্টোকে ফাঁসিতে লটকে অতঃপর জেনারেল জিয়া-উল-হক গদি দখল করলেন। ভুট্টোর নজিরবিহীন অপদার্থতার মাশুল দিতে গদিনশিন হলেন সামরিক জান্তা। মোল্লাদের সঙ্গে যার আশনাইয়ের নেপথ্যে সক্রিয় ছিল বিরাট রাজনীতি। জিয়া-উল-হক গত হওয়ার পর তাঁর শাসনকে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচাইতে Toxic, Enduring, and Tamper-proof Legacy বইলা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ ছাপছিলেন পাকিস্তানের নামকরা সংবাদপত্র ডন। জিয়া ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ইসলামি মূল্যবোধের জিগির তুলে ফরমান জারি করতে থাকেন একের-পর-এক। আজব এই ফরমানও উনার তরফ হইতে আসছিল সেই সময় …

এখন থেকে পাকিস্তানের আওরতরা শাড়ি পরিধান করতে পারবেন না। ওইটা হিন্দু কালচারের প্রতীক এবং সে-কারণে পাকিস্তানকে শাড়ি দিয়া ব্রেআব্রু করা যাবে না আওয়ামী শায়ের অর্থাৎ জনতার কবি হাবিব জালিব সেই সময় সবচেয়ে সোচ্চার হইছিলেন নজম নিয়া। লিখছিলেন এবং গাইছিলেনও বটে, হুকমারান হো গায়ি কামিন লোক/ মিট্টিমে মিল গায়া নাগিন লোক। মানে হইতেছে, কমিন্দ কিসিমের লোকজন দেশটারে হুকুম করে এখন, আর ভালা মানুষগুলা মাটিতে মিশে যাইতেছে।

জালিবকে জিয়া অনেকভাবে টোপ দিয়াও বশে আনতে পারেন নাই। যেমন পারেন নাই চিরকালের প্রতিবাদী ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে। নোবেল শর্টলিস্টে যাঁর নাম বারবার উঠছে ওইসময়। ফয়েজ হাম দেখেঙ্গে শিরোনামে দুর্দান্ত একখানা নজম বা সোজা বাংলায় কবিতা লিখছিলেন। তিনি তখন বিদেশে নির্বাসিত। জিয়া উনাকে দেশে আসতে দেন নাই। ফয়েজের নজমখানাকে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে সেই সময় ব্যবহার করছিলেন গায়িকা ইকবাল বানো। হাজার পঞ্চাশ শ্রোতার মাহফিলে নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে কালো রংয়ের শাড়ি পরে মঞ্চে দাঁড়াইছিলেন শিল্পী। আর গাইছিলেন ফয়েজের নজমনামা। সমবেত শ্রোতারা একাত্ম ছিলেন সে-প্রতিবাদে।

Hum Dekhain Gay I Faiz Ahmad Faiz I Iqbal Bano; Source – Anmol Channel

প্রতিবাদ নানা মাত্রায় এখনো জারি থাকায় পাকিস্তানে মাইয়াদের অবস্থাকে ত্রিশঙ্কু টাইপ গণ্য করা যাইতে পারে। উনাদের একাংশ মডার্ন আউটফিটে খুশহাল আছেন। একাংশ ট্রাড্রিশনাল। আরো একখান বৃহৎ অংশ সেমি-আফগানে পরিণত হইছেন ইতোমধ্যে। তবে এখন আর সেই দিন নাই যখন শালীন আউটফিটে নাজিয়া হাসানের ডিসকো দেওয়ানি ঝড় তুলছিল উপমহাদেশে। বাপ্পী লাহিড়ী ও মিঠুনের হাত ধরে ডিস্কো ড্যান্সার জনপ্রিয় হওয়ার আগে হইতে নাজিয়া ও তাঁর ভাই জোয়েব হাসানের কল্যাণে ডিস্কোফিভার ঘরে-ঘরে ছড়িয়ে পড়ছিল। ক্যান্সারে অকাল প্রয়াত নাজিয়া আমাদের ক্রেজ ছিলেন ওইসময়। আহ! আপ জেয়সা কোই নহি জিন্দেগি মে আয়ে/ তো বাত বন যায়ে/ আহ/ বাত বন যায়ে-র নাজিয়াকে গুরুজনরা বাজাইতেন, আর আমরা পুলকিত ফ্যান্টাসিতে তখন মাত্র অষ্টাদশী নাজিয়া হাসানের প্রেমে পড়তাম।

Disco Deewane – Nazia Hassan & Joeb Hasan; Source – Juan Classic Disco

পাকিস্তান এখনো উর্দু ও পাঞ্জাবি সাহিত্য, তার সুফি কালামসহ বিচিত্র গানের ভাণ্ডারে ধনী, কিন্তু কোথায় জানি মুক্ত হাওয়া নিরুদ্দেশ! মরমি সংস্কৃতির আধার করাচিতে প্রায় প্রতিদিন কোনো-না-কোনো মাজারে আক্রমণ হয়। শিয়া ও অন্য মতাবলম্বীদের মসজিদসহ খ্রিস্টানচার্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় যখন-তখন। ইরানের মতোই অবরুদ্ধ খোপে বসে পাকিস্তানি মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে মিলামিশা করেন। ক্যাম্পাস মাতান। সবই আছে, তবু কী যেন নাই…! কিছু একটা মিসিং এই বুল্লে শাহর পাকিস্তানে। ইমরান-মিয়াদাদ, ওয়াসিম আকরাম-ওয়াকার ইউনূস আর শোয়েব আখতারে ঠাসা এককালের ক্রিকেটত্রাস পাকিস্তানে। গানের কোকিল নূরজাহান, গজল সম্রাট মেহদী হাসান, কাওয়ালের বাদশাহ নুসরাত ফতেহ আলী খান, রোমান্টিক মেলোডি কিং আদনান সামী থেকে আজকের প্রমিজিং আতিফ ইসলামদের পাকিস্তানে কী যে মিসিং সেইটা কেবল উনাদের খাতুনরা জানেন!

. . .

Women in Bangladesh before the rise of Islamic Influence – Period 70s; Source – Google Iamge

সংযুক্তির শেষ পর্বে পেশ বাংলাদেশের নারীদের দেখা যাইতে পারে একঝলক। নারীদের সচেতন অংশ ওইসময় দেশ স্বাধীন করার লড়াইয়ে কীভাবে লিপ্ত ছিলেন তার একফালি ধারণ করতেছে অস্ত্র হাতে রাজপথে ও কুচকাওয়াজে শরিক সাহসী নারীদের ছবি দুখান। অস্ত্র হাতে লড়াকু বীর নারীদের দুই প্রান্তের ছবিতে সে-আমলের ফ্যাশন সচেতন নারীরা কেমন ছিলেন তার আভাস মিলতেছে। জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রা-র প্রচ্ছদে ফ্যাশনসচেতন নারীদের দেখে বেশ বোঝা যায়,- রক্ষণশীল বাংলাদেশে উনারা কতটা ডেয়ারিং ছিলেন সেই সময়। স্কার্ট ও স্লিভলেস তখন আরবান কালচারে ট্রেন্ড ছিল। স্লিভলেস পরিহিত মেয়েমানুষ অহরহ দেখছি বালেগ হওয়ার পুরা কালপর্ব জুড়ে। মধ্যবয়স্করা অধিক পরতেন এই স্লিভলেস। আর এখন, আহসান হাবিব ভাবনা স্লিভলেস পরে পোজ দেওয়ায় পাবলিক তার হাবিগুষ্ঠি উদ্ধার করতে কিছু বাকি রাখে নাই।

হাসিনাপতনের তুঙ্গ ক্ষণ যখন চলে, অভিনয়শিল্পী শবনম ফারিয়াকে দেখলাম নিজেকে প্রথম শিবির ইত্যাদি বইলা জাহির করে ফেবু প্রোফাইল লালে লাল করতেছেন। উনার হাসিনাপন্থী কলিগরা সম্ভবত উনাকে নিয়া বিদ্রুপ করেতেছিল। রাগ ঝাড়তে লাল বিপ্লবী অগত্যা নিজেকে শিবির ভাবতে দ্বিধা করেন নাই। ব্যাপার না! আবেগের বশে তখন অনেকে বিবেক হারাইছিলেন। শবনম ফারিয়ার সম্ভবত ইয়াদ ছিল না,- নাটকে খাটো পোশাক পরে নিজ স্বাস্থ্য দেখানোর কারণে পাবলিক উনাকে নিয়া হামেশা কত ট্রল আর বাজে মন্তব্য করে প্রতিদিন। প্রথম-প্রথম জবাব দিতে গিয়া দ্বিগুণ ট্রলের শিকার হইতেছেন দেখে ইদানীং বোধহয় গা করেন না। ভালো। বাংলাদেশে পাবলিকের বিকারগ্রস্ত চুলকানি গায়ে লাগাইলে উনার পক্ষে মডেলসাজে হাসিমুখে পোজ দেওয়া কঠিন হবে। যদিও উনি এখন কোন শিবিরে অবস্থান করতেছেন কে জানে! সম্ভবত আরেক যুদ্ধংদেহী লাল বিপ্লবী বাঁধন-শিবিরে আছেন আপাতত।

Bangldeshi Woman on Sari, 70s pic; Source – Google Image

যাই হোক, কবি ওমর আলীর বিখ্যাত পঙক্তিমালা স্মরণ যাই একবার। কবি লিখছিলেন : এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি,/ আইভি লতার মতো সে নাকি সরল, হাসি মাখা;/ সে নাকি স্নানের পরে ভিজে চুল শুকায় রোদ্দুরে,/ রূপ তার এদেশের মাটি দিয়ে যেন পটে আঁকা। ইতাদি। তো পটে আঁকা শ্যামল রং রমণী হইতে পাকখাতুনে বিবর্তিত বাংলাদেশে এখনো নারীকুলে বিচিত্র সাজপোশাকের বাহার দেখতে পাই। সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত রুচি মাফিক পোশাক তারা ধারণ করেন বটে। কিন্তু এযুগের কোনো মাইয়া কি ষাট-সত্তর অথবা আশি-নব্বই দশকের মাইয়াদের সঙ্গে তুলনীয় হইতে পারেন? যখন কিনা মেয়েদের উপ্রে রক্ষণশীলতা আরো সুতীব্র ছিল? যখন কিনা রাস্তাঘাটে খুদে অংশই কেবল বাহির হইতেন!

এনজিওসহ দুই নারী প্রধানমন্ত্রীর কারণে উনাদের দিন বদলাইতে শুরু করে। ব্যাপকভাবে বাহিরে আসতে আরম্ভ করেন। পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়া অগ্রসর হইতে থাকেন প্রায় সকল ক্ষেত্রে। লেখাপড়ায় ছেলেদের চাইতেও ভালো ফল করতেছেন মেয়েরা। পাশাপাশি নিগৃহীতও হইছেন একাংশ, যেমন আগেও হইতেন অহরহ। তাই বলে থামেন নাই। প্রতিবাদে জারি ছিলেন সদা। চব্বিশের হাসিনাপতনে বেটাছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও স্মরণীয় ভূমিকা পাল করছেন। তো সেই ভূমিকা পালনের জের ধরে দেশে যে-আপদ নিয়া আসলেন, এবং আরো বড়ো আপদ সামনে আনতে যাইতেছেন,- এর মোকাবিলায় তারা কতটা প্রস্তুত? নাকি ইরানের মাশা আমিনির মতো নির্মম নিয়তি মাইনা নিতে রাজি এখন?

. . .

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 1

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *