একজন কবি কায়িক সক্ষমতায় দুর্বল হতে পারেন, কিন্তু মানসিক উৎকর্ষ ধারণ করে এরকম কবিতা রচনায় তিনি হয়তো পটু। এখানে তার শ্রমমূল্য কীভাবে নির্ধারণ করবে সমাজ? অন্যদিকে একজন কৃষক ধান উৎপাদনে যে-খাটনি দিচ্ছেন, সেখানে তাকেও জল-মাটি-আবহাওয়া-জলবায়ুর ব্যাপারে জ্ঞানী ও সৃজনশীল হতে হচ্ছে। তার শ্রমমূল্য ও সামাজিক মর্যাদা কীভাবে নিরূপিত হবে? প্রথমটির উৎপাদন মূল্য দ্বিতীয়টির থেকে ভিন্ন। দুটির উপযোগিতাকে নিছক শ্রমমূল্য দিয়ে কাজেই গড় করা কঠিন।... উন্নত সমাজে কবি অধিক শ্রমমূল্যই পান কবিতা লিখে, যা হওয়া উচিত নয়। কাজেই পুরো বিষয়টি বেশ জটিল ধাঁধার জন্ম দিতে থাকে। সমাজতন্ত্র বাস্তবায়িত হয়েছে এমন দেশেও যার সুরাহা ঘটতে আমরা দেখিনি।
-
-
ব্যথা এখনো টের পায় নাই উনি। যখন পাইবে নিজ দেহটারে ভৌতিক বোধ হবে। দেখবে, পেছনটা কারা জানি রক্তাক্ত করে দিছে। বেঁচে থাকাটারে তখন টুল ব্যান্ডের শব্দ ধার করে বলি,- হোলি গিফট ভাবাটা কঠিন মনে হবে উনার। বিগ প্লেয়ার জীবন ও দেহটারে নিয়া কতভাবে তামাশা করে সেইটা জানত বইলা গানের কথায় নির্বেদের আভাস আনছিল তারা। মাঠে বিগ প্লেয়াররা নামার টাইমে বাকিরা কিন্তু ফুটনোটে রূপ নিতে থাকে। মেসি-রোনালদো যদি মাঠে নামে তখন কী অন্য কারো দিকে তাকাইতে মন চাইবে? চাইবে না। এ-কারণে তারা GOAT। কাজেই মোজো ছেড়ে Taste the feeling পান করার সময় মনে হইতেছে আমাদের জন্য বেশি দূরে নাই।
-
ইবনে খালদুনের আসাবিয়া বা গোত্র-সম্প্রীতির বৃহত্তর ভার্সন হইতেছে জাতীয়তাবাদ। এখন সেইটা যে-ফ্রেমে আমরা দেখি না কেন। জাতির আত্মপরিচয় গড়তে এইটা লাগবে, কিন্তু এর মধ্যে সংকীর্ণ হইলে ক্ষতির শেষ নাই। হিন্দু জাতীয়তাবাদের কাউন্টার মুসলমান জাতীয়তাবাদ! হাস্যকর এই ফ্রেমিংটা এখন বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষের চাওয়ায় পরিণত করছেন মজহার-এবাদ গং। হাওয়া ভীষণ অনুকূল। অ্যারাব স্প্রিং মিশরে সফল হয় নাই। উনারা মনে হইতেছে সফল করেই ছাড়বেন। ... অনেকে এর সাহিত্যিক রূপ দেখে টাসকি খাইতেছেন। আদতে এগুলা হলো পোস্ট কলোনিয়াল নাইটমেয়ার। একইসঙ্গে বিভিন্নস্তরে নিজেকে গোলাম ও শোষিত দেখার বিকার সইতে না পেরে মনে যে-ইগো পয়দা হয়, তার আউটবার্স্ট।
-
হুমায়ূনকে যদি মুছে দিতে পারে, ধরে নিন, বাংলাদেশের অত্যন্ত শক্তিশালী একটি প্রতীককে তারা সফলভাবে ইরেজ করতে পারবে, এবং সেটি সম্ভব। সাহিত্যিক আবেদনের জায়গা থেকে হুমায়ূন আহমেদ যদি নিষ্প্রভ হতেন, আমার কোনো সমস্যা ছিল না। উনাকে রাজনীতির জায়গা থেকে নিষ্প্রভ করার মতলবটি আপত্তিজনক। আমাদের কবিলেখকের ওসব নিয়ে ভাবার টাইম নেই। উনারা হুজুগ আর গুজব নিয়ে ব্যস্ত। নিজের পাছার কাপড় যে নাই হয়ে যাচ্ছে, ল্যাংটাবাবা বানিয়ে দিচ্ছে,- সেদিকে হুঁশ নেই। বাংলাদেশের সাহিত্য নব্বই থেকে অবক্ষয় ও ধসের শিকার। উদ্ধারের অবস্থায় নেই। সব ওই পেদ্রো পারামোয় পড়া মৃত গ্রামে জীবিত প্রেত হয়ে ঘুরছেন।
-
হেগেলের মতো বরেণ্য দার্শনিক কালো মানুষদের এমন এক মানবসত্তা হিসেবে দেখছেন যারা নাকি আজো শৈশব (Kindernation) অতিক্রম করতে পারে নাই। এম্নিতে শান্ত-সুবোধ কিন্তু রেগে গেলে কালোরা স্রেফ জন্তুসুলভ। বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকায় যারা বসবাস করে তাদের ব্যক্তিত্ব অবিকশিত। ব্যক্তিত্ব কী বস্তু সেইটা নাকি তারা বোঝেই না! যা-কিছু মানবতাকে সুসংগতি দান করছে তার একটাও কালো মানুষদের মধ্যে নাই! কখনো ছিলও না! হেগেল এখন এই-যে সিঙ্গেল স্টোরি বানাইলেন, তার কারণ হইতেছে কালো মানুষের জগৎকে তিনি ইউরোপে কেন্দ্রীভূত মনন ও বয়ানের আতশকাচ হাতে নিয়া দেখতেছেন। যে-কারণে সকল দার্শনিক বোধি লোপ পাইতেছে তাৎক্ষণিক!