. . .
…অর্থহীনে গণতন্ত্র বলে কিছু নাই। এটা একনায়কতান্ত্রিক ব্যান্ড। আমি এটা চালাই, আমি যেভাবে বলব, ওইভাবেই চলতে হবে। কিন্তু আমি কোনো একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার সঙ্গে বৈঠক করব। সবার কথা শুনে আমি একটা সিদ্ধান্তে আসব। ওই ডিসিশন নিয়ে বাকি তিনজনের মধ্যে একজন হয়তো বা খুশি হবে না, দুইজন হয়তো খুশি হবে। চারজন খুশি হবে, এভাবে জীবন চলে না। এভাবে একটা দেশ, কোনো প্রতিষ্ঠান চলে না, এভাবে ব্যান্ডও চলবে না। ওইভাবে ব্যান্ড চালাতে গেলে, ব্যান্ড ভেঙে যাবে। আমার কথা শুনতে হবে।
অর্থহীন-এ গণতন্ত্র বলে কিছু নাই বেজবাবা সুমন; সূত্র : প্রথম আলো
প্রথম আলোর সঙ্গে গানআড্ডায় বেজবাবা সুমনের কথাগুলা দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সঙ্গে ক্যামন জানি মিলে যাইতেছে। সুমন, বোঝাই যাইতেছে, দেশফেশ মাথায় নিয়া কথাগুলো বলেন নাই। ব্যান্ডদলের ভাঙাগড়া বিশ্ব জুড়ে চলে। নতুনত্ব কিছু নাই সেখানে। ব্যান্ডবাজদের মধ্যে বনিবনায় কমতি ঘটলে যে যার রাস্তা মাপেন। অর্থহীন এদিক থেকে লাকি। সুমনের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ধাক্কা সামাল দিয়া মোটের উপ্রে একলগেই ব্যান্ডবাজিতে সক্রিয় আছে উনারা। ক্যামনে আছেন তার গোমর ফাঁস করতে গিয়া বেজবাবা যেসব কথা বলছেন, এখন সেগুলাকে দেশের পটভূমিতে বিবেচনা করা মনে হইতেছে সম্ভব।
ব্যান্ড চালানোর তরিকা বিষয়ে সুমনের কথা হইতে ভালো একখান মোরাল কিন্তু আমরা পাইতেছি,- দলবদ্ধ যা-কিছু সমাজে বিরাজ করে সেখানে সিদ্ধান্ত ও মতামত হইতেছে পৃথক ঘটনা। সিদ্ধান্ত অনেকে মিলে নয় বরং একজনকে নিতে হবে। এখন সেইটা তিনি কীভাবে নিবেন তার উপ্রে নির্ভর করবে সাফল্য। বেজবাবা ডিরেক্ট নিতেছেন। দলের সদস্যদের সেখানে অংশগ্রহণের সুযোগ বড়ো একটা নাই। সুমন দরকার মনে করলে হয়তো শেয়ার করতেছেন, দরকার না হলে সোজা বলে দিতেছেন কী করতে হবে। নেক্সট গানখানা অথবা কর্ন্সাট উনি কীভাবে করবেন বইলা ভাবছেন ইত্যাদি।
দেশপ্রধানের পক্ষে অবশ্য বেজবাবার তরিকায় কাজ করা কঠিন। সরকার পরিচালনার বিধিনিয়মে বিচিত্র সব ধাপ আর স্তর আছে। প্রতি পদে জবাবদিহিতার বিষয় থাকে। বেজবাবার মতো প্ল্যান অব অ্যাকশনে যাওয়া কাজেই উনার পক্ষে অবান্তর। সে নাই-বা গেলেন, কিন্তু দেশটা কীভাবে চালাইবেন,- এখন এই ডিসিশন তো উনাকে নিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে তিনি কীভাবে আগানোর চিন্তা করতেছেন।
নিজ হইতে নেওয়া সিদ্ধান্ত এখন দেশচালক অন্যদের মতামতের নিক্তিতে যাচাই করে নিতে পারেন। করা আবশ্যক। বেজবাবা সুমনের পন্থা এখানে খাটবে না বিলকুল। অন্যরা যেসব মতামত রাখবে তার আলোকে কোনো কারেকশন থাকলে দেশপ্রধানকে সেইটা নিশ্চিত করতে হবে। করা উচিত বটে। দোষ ধরার কিছু নাই সেখানে। নিজের কাছে ক্লিয়ার থাকার আশু প্রয়োজন ট্রায়াল এন্ড এররের ভিতর দিয়া যাইতে উনি বাধ্য। সেখান থেকে আসবে কার সঙ্গে কীভাবে সিটিং দিতে হবে ইত্যাদি বিষয়। দেশ পরিচালনায় আমরা বোধ করি স্বাধীনতার পর থেকে এখানে আইসা বারবার তালগোল করে ফেলতেছি।
আমাদের দুই ধরনেরই ফ্যান আছে। আমরা কনসার্টে ‘নিকৃষ্ট’ গাইতেছি, মানুষজন চিৎকার করে ফাটিয়ে ফেলছে। সেই কনসার্টে ‘এপিটাফ’ করলে মানুষজন কাঁদছে। আমরা সব সময় রেলেভেন্ট (প্রাসঙ্গিক) থাকতে চেয়েছি। দিন বদলাচ্ছে, মানুষের রুচি পরিবর্তন ঘটছে। রেকর্ডিংয়ে পরিবর্তন ঘটছে, বাজানোর স্টাইলে পরিবর্তন ঘটছে। ফলে আমাদেরও পরিবর্তন হতে হবে। দেখবেন, আমাদের ত্রিমাত্রিক ও ফিনিক্সের ডায়েরি ১ অ্যালবামের ধরন আলাদা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও পরিবর্তন করেছি।
. . .
অর্থহীন-এ গণতন্ত্র বলে কিছু নাই বেজবাবা সুমন; সূত্র : প্রথম আলো
দেশ চালানোর সঙ্গে গানের ব্যান্ড চালানোর তুলনা হইতে পারে না। আমার মতো আবালও সেইটা বোঝে। তবে কোন পথ ধরলে দেশ ভালো চলবে তার সারসূত্র অনেকসময় তুচ্ছ উদাহরণেও থাকতে পারে। এই জায়গা থেকে আমি আবাল ভেবে দেখলাম,- বেজবাবার ব্যান্ডদল চালানোর তরিকা মন্দ না। বাংলাদেশের মতো ঝাউড়া একখান দেশে উনার পন্থা ওয়ার্ক করতে পারে। গণতন্ত্র বলতে বিরাট আকারে যেসব জিনিসপত্র আমরা বুঝি সেগুলা হজম করার শক্তি আপাতত আমাদের নাই। বিপ্লবকুল শিরোমণি ফরহাদ মজহার ও উনার মুরিদরা হয়তো হজম করতে পারবেন। উনাদের স্টমাক মনে হইতেছে মজবুত। আমাদের মতো আবাল বমি করে দিবে। সুতরাং উনারা হজম করতে থাকুক, আমরা অন্য তালে আগাই।
সোজা কথা ভাই, যে-দেশে আটারো কোটি মানুষ গণতান্ত্রিক সমাজের একশো আকিদা হজমে রেডি না, সেখানে তারে এই হাইপ্রোটিন গিলানো কঠিন। পেটে সইবে না। বাথরুমে যাওয়া-আসা করবে ঘনঘন। ঘর থেকে বাহির হইলে দেখবে গণতন্ত্রের ঠেলায় এ ওরে ধামকি দিতেছে, এ তারে মারতেছে, একজন অন্যজনরে ধাওয়া-হামলা-মামলা দিতেছে। বিশৃঙ্খলার চোটে লুজমোশন ও রক্তচাপ চরমে উঠবে তখন। অদ্য যেমন উঠতেছে আর কী! গণতন্ত্র কী কারণে ভালো, কোন পথে অগ্রসর হইলে ভালো ইত্যাদি সীমিত সংখ্যক সচেতন মানুষ বুইঝা কার কি লাভ? এর মাহাত্ম্য তাদের বোঝা দরকার যাদের উপ্রে ভর করে দেশ সামনে আগাবে। জোর করে জিনিসখান ঘাড়ে চাপানো মানে হইতেছে ভিক্ষা চাই না মা, কুত্তা সামলা র মতো অবস্থায় পতিত হওয়া। এম্নিতে প্যারায় আছে সবাই। ঝামেলা নিতে পারবে বইলা মনে হয় না।
স্পটিফাইয়ের তথ্য বলছে, আমাদের ১০ শতাংশ ফ্যানের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছর। এটা কেউ বিশ্বাস করবে? আমাদের বয়স যখন ১৪ বছর ছিল, তখন আমরা ৫০+ কোনো বুইড়ারে আইডল হিসেবে মানছি? ও স্টেজে উঠলে ‘বেজবাবা’, ‘বেজবাবা’ বলে চিৎকার করব কেন, ওর গান শুনে কাঁদব কেন? কিন্তু ওরা এটা করছে কারণ আমরা রেলেভেন্ট থাকতে চেয়েছি।…আমি স্টেজে গিয়ে কথা বললে ওরা আমার কথা ধরতে পারছে। আমি যখন বলছি, আমি এখন একটা ‘ফ্লেক্স’ করি? তখন ওরা বলছে, সুমন ভাই ‘ফ্লেক্স’ শব্দটা ব্যবহার করেছে? ওয়াও!
অর্থহীন-এ গণতন্ত্র বলে কিছু নাই বেজবাবা সুমন; সূত্র : প্রথম আলো
আমি ভাই সোজা বুঝি,- বাংলাদেশে আপাতত দুইখান জিনিসের বিকল্প নাই। নাম্বার ওয়ান, যিনি দেশ চালানোর ড্রাইভারি করবেন উনাকে সিচুয়েশন কন্ট্রোলে দক্ষ হইতে হবে। গাড়ি রাস্তায় আছে না খাদে পড়তেছে এই বুঝটা থাকলে কাফি। গাড়ি চালাইতে গিয়া উনার গায়ে যদি লৌহশাসক, একনায়ক, একচ্ছত্রবাদী এবং অদ্য পপুলার লেবেঞ্চুস ফ্যাসিস্ট উপাধিখানা দেশের ছুচিল সমাজের মালপোয়ারা বসাইতে থাকে তো বসাক। হু কেয়ারস! ড্রাইভার সায়েবের ওসব মাথায় নিয়া কাম নাই। উনার গাড়ি লক্করঝক্কর। রোড এমন না যে ট্রাফিক আইন সবটা উনি মানতে পারবেন। আইন থাকবে কাগজে, গাড়ি চালাবে রোডের ভাও বুঝে;- কথা লাউড এন্ড ক্লিয়ার।
দেখেন ভাই, শেখের বেটি হাসিনাকে নিয়া একশো অভিযোগ পাবলিকের ছিল, কিন্তু এইটা আপনাকে মানতে হবে,- গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে এখনো উনি আমাদের জন্য পারফেক্ট। রোডের অবস্থা বুঝে গাড়ি ছুটাইছেন পনেরো বচ্ছর। রংসাইডে গেছেন বারবার, তার মধ্যে আবার ক্যামনে জানি ফেরতও আসছেন। এখন উনাকে আপনেরা ভালো বলতে পারেন আবার খারাপ বইলা ধুমসে গালিগালাজও করতে পারেন। মাথায় তোলেন আর মাটিতে আছাড় মারেন, উভয় দিকে থেকে উনি ইউনিক। বাকিরা এখনো ফাউল। মুখে মারি বিশ্ব। এলেম নাই একছটাক। হাসিনার নখের যুগ্যি না একটাও। বাংলাদেশে কাজেই হাসিনা টাইপ ড্রাইভারের প্রয়োজন এখনো শেষ হয় নাই। ফকফকা রোডে গাড়ি চালানোর সময় আসতে ঢের বাকি। আমি আবালের জীবদ্দশায় হওয়ার চান্স দেখতেছি না।
তন্ত্রমন্ত্র যাই থাকুক, বাংলাদেশের জন্য জরুরি হইতেছে দেশপ্রধান ও তার পর্ষদরা মিলে যেসব প্ল্যান অব অ্যাকশন হাতে নিতেছেন, সেগুলা দেশের মানুষের কাজে দিতেছে কিনা সেইটা নিশ্চিত হওয়া। তারা যদি উপকৃত হয় তাহলে ফাইন। যদি না হয় অথবা উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হইতে থাকে, সেক্ষেত্রে এগুলা সংশোধন ও পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নিতে হবে। ড্রাইভার ও হেল্পার মিলে যদি কাজটা করতে ডাব্বা মারেন তাইলে বুঝতে হবে উনারা আনাড়ি। রোড থেকে লাত্থি দিয়া বিদায় করা ফরজ।
হাসিনাশাসন এই জায়গা থেকে বিবেচনা করলে ক্যামন ছিল? প্রশ্নটা ঠাণ্ডা মাথায় বিচার করা ভালো। আবেগের বশে বিবেক হারাইয়া ফায়দা নাই। আমার বুঝ বলতেছে, প্রথম গুণটা শেখের বেটির মারাত্মক লেভেলের ছিল। দ্বিতীয় গুণটায় আংশিক নাম্বার পাবে উনি। বেজবাবা সুমনের কায়দায় না গিয়া নিজের হেল্পার ও বাদবাকি লোকজনের মতামত ও শলাপরামর্শ যদি আমলে নিতো তাহলে অ্যাকসিডেন্ট ঘটত না।
উনার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ছিল কিন্তু সেইটার ভালোমন্দ পরিণাম যাচাই ও কারেকশনের জন্য আলাপ-সালাপের সংস্কৃতি তৈরির দিকে মনোযোগ ছিল না। জিদ্দি আর কতকক্ষেত্রে প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলেন। বদ খাসলত দুইটা ছাটাই করতে পারলে রোডে গাড়িটা আরো কিছুদিন ভালো রাখতে পারত উনি। দেশ নামক গাড়িটারে ভালো ফিটিং দিতে পারত তখন। কীভাবে পারত সে-বিবরণে অদ্য আর না যাই। আক্কেলমন্দরা নিজে বুইঝা নিতে পারবেন।
মোদ্দা কথা হইতেছে, বাংলাদেশে এখন বেজবাবার দল চালানোর তরিকাটা আমরা ভাইবা দেখতে পারি কিনা। অর্থহীন ব্যান্ডের যেসব গান গেঞ্জিরা পছন্দ করেন তার একটা নাকি হইতেছে বিদ্রোহী। আপনারা ভেবে দেখবেন সেই আশায় গানখানা শুনতে-শুনতে আলবিদা জানাই আপাতত।
. . .