দেখা-শোনা-পাঠ

এক অকথিত প্রেমের সুগন্ধ

কাভি কাভি মেরে দিল মে খেয়াল আতা হ্যায়;- সাহির লুধিয়ানভির নজম, খৈয়ামের সুর আর মুকেশের অপূর্ব গায়কির কারণে এই গানের মরণ নাই। যশ চোপড়ার কাভি কাভি ছবিতে কবিতার বাদশাহ সাহির লুধিয়ানভির গানখানা ব্যবহৃত হইছিল। জশন ই রিখতার এক মাহফিলে সাহির লুদিয়ানভির কারিশমা ইয়াদ যাওয়ার ক্ষণে জাভেদ আখতার বলছিলেন,- হিন্দি সিনেমায় গীতিরচিয়তাদের ষোল আনার চৌদ্দ আনা উর্দুভাষী পরিমণ্ডল হইতে আসছেন। উর্দু ভাষার রং-রস-গাম্ভীর্য এমন, গানের কথা সাজাইতে দারুণ হেল্প করে। সাহির পাঞ্জাবি হইলেও উর্দু জানতেন বিলক্ষণ, যার প্রভাব উনার নজমে গভীর।

হিন্দি সিনেমার গীতরচনায় পাঞ্জাব হইতে আগত এই কবি ও গীত-রচয়িতার ওস্তাদি এতটাই ছিল,- গানের জোরে একের-পর-এক ছবি হিট হইত তখন। স্টার বলতে লোকজন বোঝেন নায়ক-নায়িকা ইত্যাদি। আড়ালে সাহির লুধিয়ানভির মতো গীত-রচিয়তা ছিলেন আসল খেলোয়াড়। তারকাদের তারকা মানা হইত তাঁকে। বলতেনও বটে,- সিনেমা কিন্তু আমার গানের জোরে চলে,- কথাখান ইয়াদ রাইখো।

Taj Mahal A Poem By Sahir Ludhianvi – Rekhta YTC

সাহিরকে দিয়া গীত লিখানোর জন্য পরিচালকরা লাইন দিতেন। মর্জি হইলে লিখতেন। মর্জি না হলে স্ট্রেট বইলা দিতেন,- এই সিনেমা চলবে না। গান লিখে ক্যায়া ফায়দা! যাই হোক, প্রচণ্ড মাতৃভক্ত সাহির লুধিয়ানভি এতো স্মরণীয় গান লিখছেন, তার মধ্য থেকে বাছাই করা কঠিন। তথাপি কাভি কাভি অবিনশ্বর অমৃতা প্রীতমের কারণে। পাঞ্জাবি সাহিত্যে অমৃতা প্রীতম নিজগুণে স্বকীয়। সাদত হাসান মান্টো আর ইসমত চুগতাইয়ের মতো তিনিও বাংলায় অনূদিত হইছেন একসময়। তো এই অমৃতা প্রীতম ফিদা ছিলেন সাহির লুদিয়ানভির জন্য। উনার বহুল পঠিত নজম তাজমহল পাঠের দিন হইতে অমৃতা আর ছিলেন না অমৃতায়। শাহিরের সঙ্গে তখনো তার চিনপরিচয় কিছু ঘটে নাই। তিনি নিজেও অতটা পরিচিত না। লাহোরে বসে তাজমহল পাঠের ধাক্কায় কবির প্রেমে পতিত হইলেন অমৃতা। পরে চিনপরিচয় সবই ঘটছিল কিন্তু সাহির কখনো জানতে পারেন নাই অমৃতা উনার জন্য ফিদা হয়ে আছেন।

আমরাও জানতে পারতাম না সে-কাাহিনি, যদি না ততদিনে বিবাহিত ও দাম্পত্য জীবনে পুরোদস্তুর সুখী অমৃতা দেশভাগের টানে ভারত আসতে বাধ্য না হইতেন। তিনি ভারতে আসলেন। নাম কামাইলেন। বায়োগ্রাফির আদলে নিজের ইতিকথা লিখলেন। সাহির লুধিয়ানভি সেখানে স্বাভাবিক জায়গা জুড়ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি অমৃতার কাছে অন্য অর্থ বহন করত। সাহির যখন অমৃতার ঘরে বসে সিগ্রেট টানতেন, আচমকা বিদায় নিতেন,- অমৃতার মনে হইত রেশটা রয়ে গেছে। সাহির আছেন। ঘর জুড়ে বিরাজ করতেছে তাঁর সুগন্ধ।

. . .
সাহির লুধিয়ানভির জন্য অমৃতা কোন লেভেলের ফিদা ছিলেন সে-গল্প ভারতের বিনোদন জগতে মোটের উপ্রে সকলে কমবেশি জানেন। লাহোর থেকে ভারতে আসার পথে উনি নিজের সন্তান ছাড়া কিচ্ছু নিয়ে আসতে পারেন নাই। কেবল একখানা জিনিস সঙ্গে ছিল,- সেইটা হইতেছে তাজমহল । কবিতাখানা বাঁধাই করে রাখছিলেন অমৃতা। দুর্যোগের মধ্যেও সঙ্গে নিতে ভোলেন নাই। আজব এই ভালোবাসার কাহিনি শুনে মনে হয় অমৃতা যতটা না সাহির লুধিয়ানভির মধ্যে ডুবছিলেন, তারচেয়ে অনেকবেশি ওই নজমখানা তাঁকে জব্দ করে রাখছিল। উনি হয়তো তাজমহল-এ ফিদা ছিলেন। কবিতার রচয়িতা ছিলেন উপলক্ষ।

Kabhi Kabhie Mere Dil Mein – Movie Kabhi Kabhi; Singer Mukesh; Lyrics Sahir Ludhianvi; Source – Saregama Music YTC

আশ্চর্যই বটে, সাহির লুধিয়ানভি জানতেও পারেন নাই, উনার ধারণাই ছিল না,- অমৃতা তাঁর জন্য ফিদা। কাভি কাভি লেখার সময়ও কি জানতেন? জাভেদ আখতারসহ বাকিরা সেইটা নাকচ করতেছেন। যদিও এই গানের মর্মে-মর্মে অমৃতার সংগোপন ফিদা হওয়ার আর্তি অকুলভাবে প্রকাশিত। গানখানা রাজেশ সিংহের কণ্ঠে অধুনা নতুন করে শ্রোতাপ্রিয় হইছে আবার। রাজেশ এর আদি রূপটা গাইছেন। সোজাকথায় তুলনারহিত। বারবার শ্রবণ করলেও তিয়াস মিটে না। ফিল্মে সংগতকারণে সিনেমার দৃশ্যের সঙ্গে মিল রেখে যশ চোপড়াকে কাজ করতে হইছে। সেখানেও অমিতাভ বচ্চনের ওজনদার কণ্ঠে এর আবৃত্তি অপূর্ব। ততটাই অপূর্ব মুকেশের গায়কি। অমিতাভ, শশি কাপুর, রাখির কেমিস্ট্রি মিলে রোমান্টিক ছবির বাদশাহ যশ চোপড়া যথারীতি বাজিমাত ঘটান আরেকবার।

তারপর থেকে কত না শিল্পী গানখানা করতে আছেন। রিসেন্ট মুকেশ স্মরণে শ্রীকান্ত এর ফিল্মি ভার্সনটা আবার গাইছেন। শুনতে দারুণ। শ্রীকান্তের ভয়েস টেক্সচার এমন, এই ধাঁচের গানে উনি অনন্য। নিজেকে ডুবিয়ে দিতে পারেন। কাভি কাভি শুনলেই অমৃতাক ইয়াদ করে শ্রোতা। করতে বাধ্য। যারা জানেন,- অমৃতা কী নীরবে সয়েছিলেন অকথিত ভালোবাসার দহন।
. . .

Love tale of Amrita Pritam And Sahir Ludhianvi – Jashn-e-Rekhta

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 1

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *