
. . .

ইন্টারেস্টিং! অনেস্টলি, ডুয়া লিপার গান শুনলে মনে হয় না সে মিলান কুন্ডেরা পছন্দ করে। খুবই কাউন্টারইন্টুয়েটিভ। যদি বলতো মার্ক ম্যানসন তার পছন্দের লেখক, সেটা বরং অনেকবেশি কানেক্টেবল মনে হতো। আমার একজন খুবই পছন্দের ড্যানিশ গায়িকা ও পিয়ানিস্ট আছে;—অ্যাগনেস ওবেল। তার গান শুনলে মিলান কুন্ডেরাকে মনে পড়ে বা মিলান কুন্ডেরা পড়লে তার পিয়ানো কানে/মনে বাজে।

অ্যাগনেস ওবেলের নাম স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা তাহসিন ভাই। আমার প্রিয়দের একজন। ডুয়া লিপার গানের টেক্সট ধরে আলাপ করলে অ্যাগনেসকে এড়ানো কঠিন হতো। লেখাটি যেহেতু তাৎক্ষণিক, ওদিকে আগানোর কথা মাথায় আসেনি। পরে কোনো একদিন হয়তো সম্ভব হবে তা।
বড়ো কথা, এক ধরনের উত্তেজনার মধ্যে থাকায় ওসব মনেও আসেনি। কারণ, ডুয়া লিপার বইবাতিক বিষয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না। ইনফ্যাক্ট, করোনা অতিমারির দিনকালে তাঁর গান প্রথম শুনেছি। তারপর থেকে মাঝেমধ্যে অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও শোনার ও দেখার চেষ্টা করি। এর বেশি কৌতূহল জাগেনি এতদিন।
পপ ঘরানার গানে প্রত্যেক শিল্পীর কোনো-না-কোনো নিজস্বতা তো থাকেই। যেটি একসময় তার সিগনেচার মার্ক হয়ে ওঠে। ম্যাডোনার যেমন ছিল। শাকিরা, জেনিফার লোপেজ, লেডি গাগা, বিয়োন্সে, রিহানা… সকলের কমবেশি রয়েছে। ডুয়া লিপার গানে এই জায়গাটি ধরতে আমার সমস্যা হচ্ছিল। গাইছে ভালো। গানের কথায় চমকে উঠার মতো লাইন হঠাৎ ঘাই দিচ্ছে কানে! কিন্তু সব মিলিয়ে তার পার্সোনা যেন ধরেও ধরতে পারছি না;—এরকম মনে হয়েছিল তখন!
বইয়ের প্রতি তার দুর্নিবার ঝোঁক সম্পর্কে জানার পর থেকে মনে হলো,—গানে যেসব সিগন্যাল সে দিয়ে যাচ্ছে এতদিন ধরে,—তার অনেকটাই ধরতে পারা যাচ্ছে। আমার জন্য অভিজ্ঞতাটি নতুন। ম্যাডোনা থেকে শাকিরাদের প্রজন্মে যারা গেয়েছে, তাদের কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যায় কখনো পড়তে হয়নি। যেমন ধরুন, বব ডিলান যুগে নিজেকে সফলভাবে পৃথক করতে সক্ষম জোয়ান বায়েজ বা প্যাটি স্মিথদের সিগনেচার মার্ক ধরতে সমস্যায় পড়িনি কখনো। সে তাঁরা কতটা বইপড়ুয়া ছিলেন বা তাঁদের রিডিং লিস্টে কারা থাকছেন,—গান লেখার ক্ষেত্রে এসবের প্রভাব বোঝা দরকার পড়েনি। ডুয়া লিপার ক্ষেত্রে বিষয়টি ভুগিয়েছে বেশ।
বলে রাখা প্রয়োজন, প্যাটি স্মিথের প্রতি ডুয়া লিপার ফ্যাসিনেশন আছে। ডিলানযুগে প্যাটি স্মিথ কীভাবে নিজেকে পৃথক করে চেনাচ্ছেন, তার ইতিহাস নিয়ে রচিত বইটি ফ্যানদেরকে রেকমেন্ড করে প্রায়শ। আর প্যাটি স্মিথের সঙ্গে তাঁর আত্মজৈবনিক ধাঁচে লেখা বই জাস্ট কিডস নিয়ে নিজের বুক ক্লাবে আলাপও করেছে একদফা।
প্রসঙ্গত বলতে হয়, প্রথম গ্র্যামি জয়ের মধ্য দিয়ে শকিরা যখন সেনসেশন তৈরি করল বিশ্বে, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ তাকে নিয়ে ছোট্ট একটি লেখা লিখেছিলেন। দেশি মেয়ের প্রতি ঝরে পড়েছিল মার্কেজের মুগ্ধতা। তো শাকিরা কিন্তু বইটই পড়ে। ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা তাঁর রিডিং লিস্টে প্রিয়তে থাকে বলেই জেনেছি তখন। শাকিরার গানের উচ্ছলতা ও পাগলাটে আবেদনের মধ্যে যদিও হুইটম্যানের রেখাপাত বিশেষ ঘটতে দেখি না।
পপগানে রোমান্টিক বিচ্ছেদ ও ক্রেজিনেস সহজাত। শাকিরায় গানের কথা ও সুরে তা অনুরণিত মনে হয়েছিল। লাতিন ও আরব রক্ত বহন করায় তার গানের জেশ্চার একটি মনোমুগ্ধকার আবেদন জাগায়। তো এই শাকিরা যখন গানে কার্ল মার্কস কিংবা জঁ-পল সার্ত্রকে মেনশন করে গাইছে, সেটি আলাদা মিনিং তৈরি করে না। ডুয়া লিপার বেলায় মনে হচ্ছে রেফারেন্সের ভিতরে গানের চাবি নিহিত। কারণ, নিজের সাহিত্যপাঠের অভিজ্ঞতাকে এমনভাবে ব্যবহার করছে সে,—চট করে ধরার উপায় থাকে না।
কুন্দেরা বা তার পছন্দের আরো লেখক সেখানে নীরব রেখাপাত ঘটান। যার ফলে গানের টেক্সচুয়াল রিডিং জটিল হয়ে পড়ে। বইপড়ুয়া ডুয়া লিপাকে যদি বাদ দিয়ে আগান, পাঠ একরকম হবে;—এবং সেখানে তাকে (আমি অন্তত) বাকিদের থেকে এগিয়ে রাখব না। কিন্তু তার গানের ভিতরে কুন্দেরা, ইসমাঈল কাদরী থেকে শুরু করে আরো অনেকে মর্মরিত;—তথ্যটি জানার পর পাঠ বদলে যেতে বাধ্য। গানগুলোকে আপনি তখন নতুন করে কানেক্ট করছেন সেখানে।
অনলাইনে ছড়ানো ডুয়া লিপার প্রিয় বইয়ের তালিকায় মিলান কুন্দেরাকে আপনি পাবেন না। তার যে-পাঠপরিধি দেখলাম, সেখানে এসব প্রিয় বই নিয়ে শোরগোল আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। সে হয়তো ইনস্টাগ্রামে ফ্যানদেরকে কিছু বইয়ের ব্যাপারে বলেছে, তার থেকে মিডিয়া বানিয়ে নিয়েছে প্রিয় বইয়ের একখানা তালিকা। হতে পারে, ব্যবসায়িক জায়গা থেকেও তার মুখ দিয়ে কিছু বইয়ের নামধাম বের করে আনে বেনিয়া প্রতিষ্ঠান। ডুয়া লিপা যেহেতু বাজারের অংশ, এখন তার পাঠকসত্তাকে বুকার থেকে আমাজন সকলে অ্যানক্যাশ করে। কিন্তু নিজের পডকাস্টে বা সাহিত্যমঞ্চে যেসব বইয়ের নাম ডুয়া লিপা আওরায়, সেগুলো তথাকথিত প্রিয় বইয়ের তালিকা থেকে একদমই পৃথক।
আমার বেলায় অভিজ্ঞতাটি এই প্রথম হলো। বব ডিলান, বব মার্লে, নমস্য লিওনার্ড কোহেন অথবা বিটলস কিংবা পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান, এমনকি মাইকেল জ্যাকসন (আমার বিবেচনায়) আশ্চর্য ভালো লিরিসিস্ট! জ্যাকসনের গানে কথার স্বতঃস্ফূর্ত সহজ চলনে গভীরতা কিন্তু কখনো খোয়া যায় না। যদিও মুনওয়াকার পরিচয়ের ধামাকা জ্যাকসনের সংরাইটার পরিচয়কে ঢেকে দিয়েছে অনেকখানি। গানের কথা সাজানোয় তাঁর সহজাত মুন্সিয়ানা নিয়ে আলাপ তাই কম চোখে পড়ে। এমনকি আমার নিজের কখনো এঁনাদের গানের নেপথ্যে সক্রিয় সাহিত্যিক উৎস জানার কৌতূহল জাগেনি। এসব নিয়ে বিস্তর গবেষেণা অবশ্য হয়েছে পশ্চিমে।
ডুয়া লিপাদের প্রজন্মে এসে ছবিটি বেশ বদলে গিয়েছে মনে হলো। এরা একটি নতুন তরিকায় গানের কথা সাজায়। পপগানের শর্ত মেনে ছ্যাকা খাওয়ার বিষয়টি যথারীতি থাকলেও পাঞ্চলাইনগুলো ভিন্ন। যেমন ধরেন, অ্যাগনেস ওবেলের গানে কুন্দেরাকে আমাদের ধরতে সমস্যা হয় না। সেটি প্রথমত তাঁর গানের কথা ও পরিবেশন গুণের কারণে। দ্বিতীয়ত অ্যাগনেস নিজে কুন্দেরার প্রতি তার অনুরক্তির কথা শ্রোতাকে আগেভাগে জানিয়ে দিতে থাকে। কুন্দেরাকে সরাসরি টের পাওয়া না গেলেও অ্যাভেনটাইন কিংবা এটার্নাল রিটার্ন অ্যালবামের গানগুলোয় যে-জীবনবেদ মর্মরিত, সেখানে নিটশে থেকে মিলান কুন্দেরার প্রভাব-গুঞ্জন ভালোই অনুভব করে শ্রোতা।
ডুয়া লিপায় এরকম কোনো আভাস আমরা পাই না। সাহিত্যিক উৎসকে সে তার নিজস্ব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জারিত করে প্রথম, তারপর নিজের মতো করে সংকেত-সূত্র পালটে দেয়। এর ফলে গানের কথায় চমকে উঠার মতো যেসব লাইন সে রেখে যাচ্ছে,—এখন এর হদিস পাওয়া শ্রোতার জন্য বিড়ম্বনার নামান্তর।
মিলান কুন্দেরাকে কাজেই কেন সে প্রিয়তে রেখেছে, সেটি তার গানের টেক্সট থেকে উদ্ধার করা আসলেও দুরূহ। কারণ, গানের কথায় তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে না সে। যা করে সেটি হলো,—কুন্দেরার বইপাঠের অভিজ্ঞতা থেকে জারিত নির্যাসকে ব্যক্তিগত কোনো অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিশিয়ে গানের কথা সাজায় ডুয়া লিপা। অর্থাৎ ফিলোসফিটা নিচ্ছে সে,—সরাসরি কোনো সাহিত্যিক রেফারেন্স নয়।
প্রশ্ন তবু থেকেই যায়, যার গান শুনে মার্ক ম্যানসনকে হয়তো মনে আসছে, সে এখন কুন্দেরাকে তার পাঠতালিকায় কেন আবশ্যক বলে বন্দনা করছে! পাত্তা লাগাতে গিয়ে দেখলাম, দুইহাজার তেইশের হে ফ্যাস্টিভ্যালের মঞ্চে বুকারজয়ী লেখক ডগলাস স্টুয়ার্টের সঙ্গে আলাপের ক্ষণে মিলান কুন্দেরাকে কোট করছে ডুয়া লিপা। কুন্দেরার Unbearable Lightness of Being পাঠের দিনকালে তার মনে কী ঝড় বইছিল,—উপস্থিত দর্শকের সঙ্গে তা শেয়ার করছে গায়িকা।
কুন্দেরার বইটি পাঠের সময় সম্ভবত পপ সেনসেশন হয়ে ওঠেনি সে। বয়সে বেশ অপরিপক্ক তখনো;—এবং মেয়ে প্রেমে দাগা খেয়ে কাত ছিল অনেকদিন। কুন্দেরার বইটি তারপর পড়তে বসছে সে। পড়তে বসে আখ্যানের অন্যতম চরিত্র থমাসের সঙ্গে নিজের ছেলেবন্ধুকে অভিন্ন বোধ হচ্ছিল তার।
কুন্দেরার বয়ানে উঠে আসা থমাস কোনো ব্যাপারে ক্ষমা চাওয়ার বান্দা ছিল না। সম্পর্ক নিয়ে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ভালোবাসা ও যৌনতাকে আলাদা চোখে দেখে সে। যে-কারণে দৈহিক চাহিদার জন্য যাকে বেছে নিলো, তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদে দুঃখিত হওয়া বা সরি বলার কোনো দায় থমাস অনুভব করে না। মেয়েটি তাকে ভালোবাসলেও না। ডুয়া লিপার ফিউচার নস্টালজিয়া গানে আলফা মেল ও ফিমেল বিষয়ক কথাবার্তা, আমার ধারণা,—ওখান থেকে এসেছিল।
সে যাকগে, ডুয়া লিপা তার ছেলেবন্ধুর মধ্যে থমাসকে দেখতে পাচ্ছে তখন;—এটি হলো আসল ঘটনা! কুন্দেরার বই পাঠের সুবাদে মেনে নিচ্ছে,—সম্পর্ককে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা থাকবেই। কে কীভাবে দেখছে, তার ওপর নিজেরটা আমরা চাপিয়ে দিতে পারি না। পারি না ঠিক আছে, কিন্তু বিশ্বাস করে যে-কিনা প্রেমে পড়ল ও নিজের সবকিছু দিতে পরোয়া করল না,—তার কী হবে? সে তো যন্ত্রণা পাচ্ছে। দুটি সত্তা সুতরাং পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এখানে। ডুয়া লিপা যেটি তাঁর লাভ অ্যাগেইন গানে ডেলিভারি দিচ্ছে বলে আমি এখন ধরে নিচ্ছি। নিচে গানের পাঞ্চলাইন খেয়াল করুন। গায়িকা নিজেকে ঝেড়ে দিচ্ছে একদম :
So many nights, my tears fell harder than rain
Scared I would take my broken heart to the grave
I’d rather die than have to live in a storm like before
But goddamn (goddamn), you got me in love again
তো এখান থেকে মিলান কুন্দেরার টেক্সটকে মেয়েটি কানেক্ট করছে। ভালোবাসা ও প্রবঞ্চনার কৌতুক কুন্দেরা পড়তে যেয়ে সে ভালোই ধরতে পারছে এখন। ধরতে পারলেও এটি তাকে স্বস্তি দিতে পারছে না। নিজের মতো করে কুন্দেরার সঙ্গ আসলে তর্ক জুড়ছে মেয়ে!
ছেলেবন্ধু থমাসকে এই ডুয়া লিপা যেতে দিচ্ছে। কুন্দেরাকে অনার করে যেতে দিচ্ছে তাকে, কিন্তু এটি ভুলতে পারছে না,—যে-থমাসকে সে ভালোবেসেছিল,—প্রতারিত হয়েছে জানার পরেও তাকে ভালোবাসার তাড়নাকে বিদায় বলা কঠিন ঠেকছে;—আসলে হয়ে উঠছে না একদম! সুতরাং পালটা আঘাত হেনে বলছে,—যাচ্ছো যাও, কিন্তু তোমাকে আমার কাছে ফিরতে হবে চান্দু। আমাকে ভালোবাসতে হবে। এছাড়া রেহাই নাই তোমার!
তার এই আজব ভাবালুতার কারণ কিন্তু কুন্দেরা স্বয়ং। তাঁর বিখ্যাত দার্শনিকতা এখানে তাকে কাঁপাচ্ছে। যেখানে তিনি বলেছিলেন,—মানবসত্তা স্মরণ ও বিস্মরণের মধ্যে বাঁচেমরে। স্মৃতিকে ভুলতে পারা সম্ভব হচ্ছে না বুঝে ডুয়া লিপা যেন-বা কল্পনায় থমাসের মতো পুরুষকে নিজের দিকে ফেরত আনার হাস্যকর মহড়া দিচ্ছে গানে। নিজের গানে ডুয়া লিপা এভাবে কুন্দেরাকে টানছে;—যদিও তা বোঝার কোনো জায়গা রাখেনি সে! যতক্ষণ না তার মুখ থেকে আমরা জানতে পারছি কী কারণে কুন্দেরার বইটি তাকে কাঁপিয়েছিল সেইসময়!
ছেলেবন্ধুর কাছে ডুয়া লিপা নিছক একটি দেহ ছিল। একটি সম্পর্ক;—যাকে সে যৌনপরিতোষ মিটানোর জন্য ব্যবহার করেছে। ডুয়া লিপার কাছে ছেলেবন্ধুটি কেবল দেহ নয়। ওটা ছিল স্মৃতিময় সম্পর্ক যাপন; এবং সেখানে দুজনের দেহমিলনের স্মৃতিগুলো মিশে আছে। কাজেই বিস্মৃত না হওয়া অবধি এর থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন বলে ধরে নিচ্ছে সে।
নারীরকুল আসলে এসব ব্যাপারে ভীষণ স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। পুরুষকে সম্পূর্ণ করে পেতে চায় তারা। এটি অনেকসময় আমলে না নিয়ে,—পুরুষটির সত্তা ও চাওয়ার স্বাধীনতার ওপর নিজের অনুভূতি ও চাহিদা সে আসলে চাপিয়ে দিচ্ছে! সুতরাং প্রতারিত হওয়ার যন্ত্রণায় মেয়েরাই অধিক পড়ে ঘনঘন।
সম্পর্কের এই সূক্ষ্মতাগুলো শাকিরার গানেও প্রচুর পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে শাকিরা হাহাকার ও পাগলামি জানান দিয়ে এক্সিট নিয়ে নেয়। জেরার্ড পিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর চড়া স্বরে গান বাজিয়ে প্রতিবেশীর ঘুম হারাম করা পাগলামি শেষে এক্সিট নিতে সময় নেয়নি। এখন পিকে-কে উপহাস করে মাঝেমধ্যে গানের কথায়। চালাক মেয়ে। ডুয়া লিপায় চাপা কান্নার মতো প্রতারিত হওয়ার ক্ষতরা জেগে থাকে মনে হচ্ছে। অতিরিক্ত বই পাঠের ফলাফল এদিক থেকে তার জন্য অভিশাপ বটে।
হে ফ্যাস্টিভ্যালে পছন্দের বইয়ের কথা বলতে যেয়ে ডুয়া লিপা এও বলছে :—আমি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হই বেশি। তার গানে এটি কিন্তু রয়েছে। এসবের বাইরে লেখকদের নিয়ে তাঁর আলাপগুলো যদি একে-একে দেখি, তাহলে সে কোন ধরনের বইকে প্রিফার করছে অধিক, সেটি কিন্তু ভালোই টের পাওয় যায়।
শরণার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা যেসব সাহিত্যে উঠে আসছে, সেগুলোর প্রতি তার আগ্রহ প্রবল মনে হয়েছে। যেহেতু তার পরিবারের কসোভা থেকে ইংল্যান্ডে আসার সঙ্গে এর যোগ রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে সমাজকে নিয়ন্ত্রণের জায়গাটি নিয়ে যেসব লেখক কাজ করছেন, অর্থাৎ দমন-পীড়ন যে-ভাষার জন্ম দিয়ে থাকে সমাজে, এবং যারা এসব নিয়ে লিখছেন সম্প্রতি,—তাদের প্রতি তার আগ্রহ দুর্দমনীয়। এবং, ভাষার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত ব্যক্তিমানস তাকে ভাবায় বেশ।
সব মিলিয়ে পপকুইনকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ (আমার বিবেচনায়) থাকছে না আর। যদি না জানা যেত,—এই মেয়ে বইখোর। রিডিং আসলে একজনকে দেখার ধারণা বদলে দেয়। দেরিদা একেই অকথিত স্পেস বলতে চেয়েছিলেন। যা আমরা হঠাৎ জানতে পারি;—এবং তখন সেটি গান অথবা ছাতামাথা যাই হোক-না-কেন,—তাকে পাঠের ধরন ও ব্যাখ্যা পুরোপুরি পালটে যায়।
. . .
. . .