সাম্প্রতিক

জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা

. . .
অনেক সীমাবদ্ধতা এখনো আছে, কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে পজিটিভ ফোর্স হচ্ছেন দেশের নারীশক্তি। যত সমালোচনা করি,- দুজন নারী প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ মেয়াদে দেশ শাসন করায় নারীবান্ধব কিছু কর্মসূচী আমরা বাস্তবায়িত হতে দেখেছি। আরো বেশি হতে পারত, কিন্তু সত্যটি মানতে হবে,- পুরোদস্তুর পিতৃতান্ত্রিক সমাজে ঘেরাও ক্ষমতাছকে বসে নারীবান্ধব কর্মসূচী তাদেরকে নিতে হয়েছিল। ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু বাস্তবায়নে হাত দিতে পারেননি। পোশাকশিল্প, এনজিও ও নারী আন্দোলনে সক্রিয় প্লাটফর্মের অবদানও স্মরণ করা উচিত। যদিও ইদানীং তারা পথহারা বেনিয়া!

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী হওয়ার কারণে অর্থনীতিসহ দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ জরুরি। ওই পর্যায়ে অবদান রাখার মতো নারী-জাগরণ দেশে ঘটেনি। এর পেছনে কেবল পুরুষরা দায়ী এমন নয়। নিজের শক্তি ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করার বয়ান তৈরিতে নারী স্বয়ং পিছিয়ে আছেন। অসংখ্য দেয়াল তোলা আছে, এখন সেগুলো রাতারাতি ভেঙে পড়বে না। ভাঙতে হলে নারী নিজে কী চায় সেটি তাকে পরিষ্কার তুলে ধরতে হবে।

বেগম রোকেয়া আমাদের প্রথম প্রেরণা ছিলেন। সুলতানার স্বপ্ন-এ যে-স্যাটায়ারঘন আকাঙক্ষার বীজ তিনি বপন করলেন, সুফিয়া কামাল থেকে তসলিমা নাসরীনে পৌঁছানোর সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিলেও রোকেয়ার স্যাটায়ারকে নবীকরণ করা সম্ভব হয়নি। ইকোফেমিনিজেমর আলাপ তসলিমা নাসরীনরা গোড়ার দিকে তুলেছিলেন। সমাজে তো কেবল নারীশক্তি প্রান্তিক, ঘটনা সেরকম কিছু নয়। কৃষক-শ্রমিক-আদিবাসী থেকে আরম্ভ করে বিপন্ন প্রকৃতি ও জলবায়ুর সবটা কমবেশি প্রান্তিকবর্গে পড়ছে। নারী অধিকারে এসবকে একীভূত করার ভাবনা ও সচেতনার জাগরণ পরে কিন্তু ভাষা পেতে দেখেনি বাংলাদেশ।

Ecofeminism: AI Generated Artwork: Third Lane

নারী ও পুরুষের পারস্পরিক ন্যায্যতার জায়গাগুলো আজো চাপা পড়ে আছে। বিনির্মাণের ভাবনায় গলতি শোধরানো যায়নি। নারী-জাগরণের আলাপে ধর্মকে কোন চোখে দেখা হচ্ছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। বেগম রোকেয়ার যুগে বসে দেখছি নাকি নতুন বয়ান তৈরি হচ্ছে সেখানে… এসব আলাপ অসমাপ্তই রয়ে গেছে। পাল্টাপাল্টি দোষারোপের বৃত্ত থেকে নারী অধিকারে সোচ্চারকণ্ঠ বা তার বিপ্রতীপ শক্তির কেউই বেরিয়ে আসতে পারেনি।

দেশে নারীবাদ এখনো দ্য সেকেন্ড সেক্স-এর বৃত্তে ঘুরছে। নারী যখন পুরুষকে আদার বা অপর হিসেবে দেখেন, তখন তিনি বেগম রোকেয়ায় ফেরত যেতে থাকেন। পুরুষরা যেমন নারীকে ডিফাইন করে ও করতে চায়… ফেরত যাওয়াটা সেখানে প্রকারান্তরে ওই পুরুষবাদী বয়ানের প্রতিধ্বনি করে সেখানে। এতে দুই পক্ষে লড়াই বাঁধে বটে, কিন্তু দিনশেষে নারী হয়ে ওঠে বিকল্প পুরুষ। নারীবাদ কি আধিপত্যবাদ চায়, নাকি চায় অংশীদারিত্ব ও ন্যায্যতা? অংশীদার হিসেবে উভয়ের মধ্যে আমরা সমতা চাইব, নাকি ন্যায্যতা? অর্থাৎ ইকুইটি ও ইকুয়ালিটির মধ্যে ফয়সালা এখনো বাকি। নারীদের মুখ থেকে এই ব্যাপারে আমরা কথা শুনতে চাই। ব্যাপকভাবে…।

The handmaid’s Tale Artwork by Margaret Atwood Source: Google Image

তথাপি তারা হলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে ইতিবাচক শক্তি। নারীকে যারা প্রকারান্তরে অবরুদ্ধ করবে বা করতে চাইবে তাদেরকে ঠেকানোর লড়াই কেন প্রয়োজন সেটি সকল স্তরের নারীসমাজ যত দ্রুত অনুভব করবেন, দেশটা পাকিস্তান, আফগানিস্তান হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এখানে শত্রু চিনতে ভুল হলে বিপদ। মনে রাখা চাই, ইরানের মতো প্রাগ্রসর দেশ কিন্তু খোমেনিদের উত্থান ঠেকাতে পারেনি। এখন সময় যদিও ভিন্ন, তবু অপশক্তি যদি ক্ষমতায় চলে আসে, ঘাঁটি গেড়ে বসে, নারীদের জন্য পরের লড়াই ভীষণ কঠিন হবে। পুরুষরা যাকে বলে তাদেরকে চেপে ধরবে। দৈহিকভাবে ধরবে। মগজধোলাইয়ের ফ্যাসিবাদেও নারীশক্তিকে তারা নিঃস্ব করে ছাড়বে। যেখানে এক নারী স্বয়ং অন্য নারীর শত্রু হয়ে উঠবেন। যে-কারণে কে আমার জন্য অন্তরায় সেটি আগে আমলে নিতে হবে।ঢাবির এই তরুণ শিক্ষার্থীকে স্যালুট। উনি শত্রু চিনতে ভুল করেনি।

. . .

Jago Nari Jago Bonnishikha: Sushmita Anis Source: Bangla Music YouTube Channel

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

Contributor@thirdlanespace.com কর্তৃক স্বত্ব সংরক্ষিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *