. . .
শর্ট ইন্ট্রো : পনেরো বছর মেয়াদী হাসিনা-শাসনের নাটকীয় অবসানকে কেন্দ্র করে রাজাকার ট্যাগের নতুন মেরুকরণ নিয়া থার্ড লেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখ কিছু আলাপ হইছিল। সওয়াল খাড়া করা ও তার জওয়াব অনুসন্ধানের তাড়না ছিল প্রবল। আহমদ মিনহাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান জাভেদের মধ্যে চলমান দুই রজনীর বাতচিত সাইটে গরমাগরম তুলতে পারলে ভালো হইত, কিন্তু বিবিধ জটিলতার কারণে কাজটি সম্ভব হয় নাই। সাইট তখন মাত্র ভূমিষ্ট হইতেছেন। প্রস্তুতিকাল চলতেছিল। আলাপের প্রাসঙ্গিকতা তাই বলে তামাদি হয়ে যায়নি। বিস্তারিত পরিসরে গমনের প্রয়োজন এখনো অমলিন মনে হইতেছে। কাজেই হাসিনাপতনের একুনে চার মাস পূর্ণ হওয়ার ক্ষণে আলাপটি দুই কিস্তিতে সাইটে আপ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হইছে। পাঠক যদি অনুগ্রহ করে পাঠ করেন, সহমত ও দ্বিমতের জায়গা থেকে প্রশ্ন তোলেন, মন্তব্য ও মতামত রাখেন, সেক্ষেত্রে আরো বিস্তারিত ও গভীরে যাইতে পারা যাবে বইলা আমরা আশা রাখি।
. . .
. . .
এসব এখন এক্সপোজড হইতে থাকবে জাভেদ। আখেরে তাতে কতটা কী ফায়দা হইতেছে সে-ভাবনায় বোধকরি গমন করা প্রয়োজন। উনিশশো একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়া জাতি আজো সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারেন নাই। জাতির একাংশ তাদেরকে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ লাভের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দিনগুলোয় পাক সেনাবাহিনির দেশীয় চর গণ্য করেন। গণহত্যা থেকে আরম্ভ করে সকলপ্রকার ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে রাজাকার বইলা সাব্যস্তও করে থাকেন। ফ্যাসিস্ট শক্তির এজেন্ট রূপে তাদের পিঠে বসানো ছাপ্পা জামায়াত আজো মুইছা ফেলা দূরে থাক, ভালোভাবে ডিফেন্ড করতে পারে না। অন্য অংশটি তাদের অপরাধের মাত্রা ও চরিত্র ইত্যাদির ব্যাপারে সন্দিহান। উনারা মনে করেন,- তারা অপরাধ করছে তাতে সন্দেহ নাই, কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে আওয়ামীপন্থীরা সেই অপরাধকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড়ো করে দেখাইতে চেষ্টা করে। রাজাকার বইলা জামায়াতকে প্রতিপন্ন করতে চায়।
অন্য অংশের দাবির সত্যতা নাই এমন নয়। রাজাকারকে যদি পাকিসৃষ্ট আধা-সামরিক বাহিনি গণ্য করি তাইলে তখনকার নানা ফুটেজ ও তথ্যপ্রমাণ মোতাবেক মানতে হবে, যারা এই দেশে মুসলিম লীগ করত তাদেরকে নিয়া স্বেচ্ছাসেবক টাইপের রাজাকার বাহিনি গঠন করা হইছিল। ঠিক যেভাবে শান্তি কমিটি গঠন করছিল পাকিরা সেই সময়। জামায়াতের লোকজনের ভূমিকা ও সম্পৃক্ততা সেখানে মুখ্য ছিল কি? নাকি মুসলিম লীগ মুখ্য ছিল সেখানে?জামায়াত, যতদূর জানি, পৃথক পরিসরে নিজের ভূমিকা নিভাইতেছিলেন। প্রথমত, আল বদর, আল শামস বাহিনি গঠন ও সেখানে নিজের লোকজনকে সম্পৃক্ত রাখছিলেন তারা। দ্বিতীয়ত, মুক্তিযোদ্ধাদের দেশবিরোধী প্রতিপন্নে জনমত তৈরিতে ছিলেন মারাত্মক সক্রিয়। তৃতীয়ত, বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্য দিয়া বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য ও ভঙ্গুর করার নিকৃষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করছিলেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তিনটাই গুরুতর অপরাধ এবং এর জন্য উনাদেরকে নিষিদ্ধ করার দাবিকে অযৌক্তিক ভাবা কঠিন হয়।
প্রশ্ন হইল, রাজাকার ট্যাগের সঙ্গে ডিরেক্ট সম্পর্কিত না হওয়া সত্ত্বেও জামায়াতের নেতারা কোন দুঃখে ট্যাগটি বহনে বাধ্য থাকলেন? পরে যেইটা সফলভাবে তারা ডিফেন্ড করতে পারে নাই কখনো, উলটা চব্বিশে এসে ওই ট্যাগটারে মুক্তিযুদ্ধের এনকাউন্টার রূপে ফেরত আনছেন? এইটা এমন এক পলিটিক্স যার সত্যতা পরীক্ষিত নয়। উভয় পক্ষের বাইরে স্বয়ং জামায়াতের ব্যাখ্যা কী? আমরা বোধহয় কমই তা জানা-বোঝার চেষ্টা করি। একাত্তরে সিংহভাগ বাঙালি জনগোষ্ঠীর সম্মতির বিপক্ষে তারা গেল কী কারণে? সওয়ালের উত্তরে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব সবসময় বলার চেষ্টা করছেন …
ক. পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার প্রয়োজনে তারা এই ভূমিকা নিভাইতে বাধ্য ছিলেন। ভারতের সাজানো ছকে পাকিস্তান ভেঙে যাক এইটা কোনো দেশপ্রেমিক চাইতে পারে না।
খ. ইসলামি আদর্শে রাষ্ট্র গঠনের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দল ইসলাম বিপন্ন হয় অথবা মুসলমানদের ঐক্যে ফাটল ধরে এমন অশুভ তৎপরতায় সায় জানাইতে পারে না। এইটা প্রতিহত করা তার ইমানি দায়িত্ব।
গ. যেসব নেতাকে কাঠগড়ায় ফাঁসি ও কারাদণ্ডের জন্য তোলা হইছে, সেখানে বিচারিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না। অনেক বানোয়াট অভিযোগ নিয়ে আসা হইছে, যার সত্যতা যাচাইয়ের সুযোগ আদালত রাখেন নাই।
যাই হোক, জামায়াতসৃষ্ট বয়ানের সত্যমিথ্যা ও যৌক্তিকতা নিরূপণের আলাপে আপাতত না যাই। যেকথা বলার জন্য এই অবতারণা সেদিকে যাওয়া যাইতে পারে। প্রশ্ন হলো,- একাত্তর নিয়া বয়ান ও পাল্টা বয়ানের যেসব ধারা গত তেপান্ন বছরে দেশে পয়দা হইছে, এখন এর দায়ভার কে নেবেন? ভারতসৃষ্ট বয়ান ওদিকে একাত্তরকে পাকিস্তানের সঙ্গে নিজের ঐতিহাসিক কনফ্লিক্টের জায়গা হইতে দেখে। তার নিজের জন্য এই রাষ্ট্রকে সে হুমকি বইলা বিবেচনা করে। এর সংহতি বিনষ্টে চেষ্টার ত্রুটি করে না। ভারতীয় বয়ানে একাত্তর এই জায়গায় আইসা ১৯৬৫-র প্রতিশোধ হিসেবে গণ্য হইতে থাকে। পাকিস্তানও মোটা দাগে এমনটাই করে সবসময়।
পাকিস্তানসৃষ্ট বয়ানে শেখ মুজিবসহ আমরা সকলে গাদ্দার বইলা বিবেচিত হইতে থাকি। লে. জে. নিয়াজি দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান কিতাব রচনা করে যেইটা মিন করতে চাইছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র ও জনগণ আজোবধি সেই মতে মাথা নাড়ায়। এখন পাকিস্তানের বয়ানকে আমরা সহজে প্রত্যাখ্যান যাইতে পারি, এবং গিয়াও থাকি। ভারতসৃষ্ট বয়ানের ক্ষেত্রে সেইটা পারি না কেন? হয় নীরব থাকি নতুবা উপেক্ষা যাই। কেন?
. . .
. . .
একাত্তরে জনযুদ্ধের যে-স্পিরিট সেখানে সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতের লেশমাত্র ছিল না। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষ যুদ্ধে শরিক ছিলেন। পাকিবাহিনি ও তার দেশি অনুচর রাজাকার, আল বদর, আল শামসের হাতে উনারা নির্যাতিত হইছেন। স্বাধীনতার পরে প্রণীত সংবিধানে ধর্ম বিষয়ক মামলায় রাষ্ট্র সকল অবস্থায় সমদর্শী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে;- এরকম একখানা ম্যান্ডেট দানের পরেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও জাতীয়তার ধারণাকে আমরা কেন কবর দিতে পারি নাই? স্বাধীনতার অনতিপরবর্তী দিনগুলায় দেশে জনগোষ্ঠীর একাংশের মধ্যে কেনই-বা দ্রুত ভারতবিদ্বেষ সৃষ্টি হইল, যেটি পরে আর নিরাকরণ করা গেল না?
ওপরে যে-বক্তব্য ও সওয়ালগুলা রাখার চেষ্টা করছি সেগুলার ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে আগ্রহী। জামায়াতসহ ইসলাম ভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থানকে যদি না বুঝি, যদি ডিপে গিয়া ভাবতে না পারি, আমার মনে হয় কেবল একাত্তরের চেতনা কপচে আমি-আপনি-দেশবাসী বেশিদূর অগ্রসর হইতে পারব না। জনমত এমনভাবে বিভক্ত, কোনো বয়ান আর সর্বজনগ্রাহ্য হওয়ার জায়গায় নাই। সেই দিন নাই যে নিজের বয়ানকে আপনি বাকিদের উপ্রে ডমিনেট করতে দিবেন। ডমিনেট করা মানে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হওয়া। আমরা কি সেইটা চাইব? নাকি একাত্তরে সংহত চেতনা অটুট রাখতে বিকল্প পথ খুঁজব? কোনটা?
. . .
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকে জামায়াতে ইসলামী একটি মতাদর্শিক দল হিসেবে গড়ে ওঠে। তার উদ্ভবের সময়কালে অনেকে যদিও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ও দল গঠনের বিরোধিতা করেছিলেন। বিরোধিতা থাকলেও পাকিস্তান রাষ্ট্র জামায়াতের মতো দলকে বিকশিত হতে বড়ো কোনো বাধা প্রদান করেনি। বিকাশের সময়কালে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দলটি মনোনিবেশ করে। এখানে তাদের ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতার জন্ম দিয়েছিল। শুরু থেকে বৈপ্লবিক ধারণা ও কাদিয়ানীসহ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে উগ্র মনোভাব পোষণের কারণে জামায়াতে ইসলামির রূপকার মাওলানা আবুল আলা মওদুদীকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান এক অধ্যাদেশবলে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধও করেন। পূর্ব পাকিস্তানে দলটির কার্যক্রম গোড়া থেকে সচল ছিল। ১৯৫৪ সালে গোলাম আজম দলে যোগ দেন এবং দ্রুত প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। ১৯৬৯ সালে দলটির আমির হন গোলাম আজম। বাংলাদেশ তখন স্বাধীন হওয়ার পথ পাড়ি দিচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াত সরাসরি বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুনরায় নিষিদ্ধ হয় এবং গোলাম আজম নাগরিকত্ব হারান। এই ইতিহাস সকলে কমবেশি জানি, তথাপি প্রেক্ষাপট বুঝতে পুনরায় স্মরণ করছি এখানে।
এখন জামায়াতের রূপকার মওদুদীর প্রসঙ্গে আসা যাক। আবুল আলা মওদুদীর রাজনৈতিক দর্শন কী ছিল? এ-ব্যাপারে মওদুদীর বয়ান থেকে শোনা যাক তিনি কী বলছেন। মাওলানা মওদুদী বলছেন :
আমি অতীত ও বর্তমানের কারো কাছ থেকে দ্বীনকে বুঝবার চেষ্টা না করে সর্বদা কোরআন ও সুন্নাহ থেকে বুঝবার চেষ্টা করেছি। অতএব খোদার দ্বীন আমার ও প্রত্যেক মুমিনের কাছ থেকে কী দাবি করে, একথা জানার জন্য আমি দেখার চেষ্টা করি না,- অমুক বুযুর্গ কী বলেন ও কী করেন। বরং শুধু দেখার চেষ্টা করি,- কোরআন কী বলে এবং তার রসুল (সাঃ) কী করেছেন।
মওদুদী বিশ্বাস করতেন,- মুসলিমদের ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করা উচিত। খিলাফতে রাশিদার শাসনছক মেনে শরিয়া ও ইসলামি সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তিনি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কুফল হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে বিবেচনা করতেন। ফলে তার মূল আকিদা ছিল ইসলামি রাষ্ট্রবাবস্থার পূর্ণ বাস্তবায়ন। এই আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে বারবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গেছেন মওদুদী। তাঁর আদর্শকে ধারণ করে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এসেছে সবসময়। আবুল আলা মওদুদীর পর জামায়াতের বড়ো মাপের তাত্ত্বিক সংগঠক রূপে গোলাম আজমকে আমরা বিবেচনা করতে পারি। জামায়াতে ইসলামীর ভিত স্থাপনে দুজনের ভূমিকা যুগান্তকারী ছিল, যেটি এখন শফিকুর রহমানরা বহন বা এর সম্প্রসারণ ঘটাতে ত্রুটি করছেন না।
মুক্তিযুদ্ধ ও পূর্বাপর ভূমিকা বিষয়ে জামায়াত ইসলামীর বয়ানগুলোর দিকে এবার আমরা দৃষ্টি দিতে পারি। পাকিস্তান ও জামায়াতে পরিবেশিত বয়ানে মুক্তিযুদ্ধকে কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর বিশৃঙ্খলা এবং ভারত কর্তৃক পাকিস্তান ভাঙার চেষ্টা হিসেবেই দেখা হয়। অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষায় ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে বলে সবসময় দাবি করে থাকে। বাংলাদেশে জমায়াতের বর্তমান আমির শফিকুর রহমানও কিন্তু হাসিনা শাসনের অবসান ঘটার পর যেসব সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেখানে গোলাম আজম, নিজামির সুরেই কথাটি পুনরায় আওরে চলেছেন। যাই হোক, জামায়াতে ইসলামীর এই বয়ান একাত্তরের পটভূমি যদি বিবেচনা করি, তাহলে সেটি কতটা বাস্তব বা যৌক্তিক এই প্রশ্নটি সেখানে উঠবে। সকলে অল্পবিস্তর জানেন, তবু কিছু বিষয় আমরা পুনরায় স্মরণ করছি এখানে …
১। ভাষা ও জাতীয়তাসহ নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও কেবল ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভাবনা মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্বের বিষয়টি দেশভাগের সময় আমলে নেওয়া হয়নি। প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে ও ভারতের পেটের ভিতরে বসে থাকা পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন করা পশ্চিম পাকিস্তানিদের পক্ষে কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না।
২। পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্ম নেওয়ার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তান চরম বৈষম্যের স্বীকার হয়। শুরুতেই ভিন্ন ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও জীবনদানের ঘটনা রাষ্ট্রের ভবিষ্যত অনেকটাই নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
৩। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অধিকার আদায়ের লড়াই জারি থেকেছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা আর প্রতিরোধের মুখে শেষ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিদায় নিতে হয়।
ওপরে যে-প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে তুলে ধরলাম তার আলোকে জামায়াতকে কী করতে দেখছি আমরা? আমরা দেখছি, দলটির থিংক ট্যাঙ্ক গোড়া থেকে ভুল রাজনীতি করে যাচ্ছেন। সহিংসতা ও বিদ্বেষের ছকে বিচরণ করছেন তারা। পূর্ব পাকিস্তানের অধীন বাঙালিদের আশাভঙ্গ ও প্রতারিত হওয়ার বেদনা আমলে নিচ্ছেন না। জন-আকাঙ্ক্ষা বোঝার ক্ষেত্রে তারা গোড়ায় যে-ভুলটি করেছিল, সেটি একাত্তরে রিপিট করেছেন গোলাম আজম।
ভারতের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে বলতে হয় ১৯৪৭-এর পর পাকিস্তানের সাথে কাশ্মীরসহ অন্যান্য ইস্যু নিয়ে বিরোধ জীবিত ছিল। ১৯৬৫ সনে সংঘটিত যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। ১৯৭১-এ শেখ মুজিবের পক্ষে অবস্থান নিতে যার ভূমিকা প্রবল ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে,- বাঙালি ওইসময় যে-আকাঙ্ক্ষায় উত্তাল ছিলেন, এখন ভারত কি এর বিরুদ্ধে গিয়ে শেখ মুজিবকে সাহায্য করেছে? ভারত না হয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্র হলেও কি একই কাজ করত না? সাত কোটি বাঙালির বৃহৎ অংশের কাছে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা ঠুনকো হয়ে পড়েছিল। ভারত যদি পাকিস্তানের শত্রু হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধী সঠিক পথে ছিলেন মানতে হবে। শেখ মুজিবের আকাশস্পর্শী আবেদন তিনি ধরতে পেরেছিলেন, সেইসঙ্গে ভুট্টো-ইয়াহিয়া গংদের অপদার্থতা বুঝতেও সময় লাগেনি। সুতরাং ইন্দিরা বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়কের মতো বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন তখন। দেশ স্বাধীন হওয়ার মধ্য দিয়ে উনার সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল।
এখন আসি জামায়াতে ইসলামী কেন বা কীভাবে যুদ্ধাপরাধী এই বিষয়ে। পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার অজুহাতে জামায়াতি নেতা-কর্মী ও অনুসারীদের সহিংস রাজনীতি যুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি। শান্তি বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন স্বয়ং গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদরা। জামায়াত ছাত্রসংঘের নেতা কর্মীরা আল সামস ও বদর বাহিনী গঠন করে সশস্ত্র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। রাজাকার বাহিনীতেও তাদের অংশগ্রহণ ব্যাপক ছিল। গণহত্যা আর নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ তো ছিলই, এর পাশাপাশি এসব ঘৃণ্য কাজে সরাসরি অংশ নিয়েছিল জামায়াত। স্বাধীন হতে মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত দেশটাকে মেধাশূন্য করার বাসনায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার মিশনটি ছিল সবচেয়ে জঘন্য। তারা এখন যতই মিথ্যচার করুক-না-কেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার নকশায় জামায়াতের সম্পৃক্তি কেবল কোনো বয়ান নয়, ফ্যাক্ট হিসেবেও ভালোভাবে প্রমাণিত। যারা একে নতুন সব বয়ান হাজির করে ঘোলাটে করতে সচেষ্ট, তাদের পক্ষে হালে পানি পাওয়া কঠিন। হাজার চেষ্টা করলেও অপরাধটি জামায়াতকে তাড়া করে ফিরবে সবসময়।
জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী নেতা আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭১-এ জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দল থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ৭১-কে যদি আপাতত বাদও দেই, তথাপি জামায়াতের রাজনীতিকে গ্রহণযোগ্য বলা যাবে কি? তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম জামায়াত নেতাদের বিচারের আওতায় আনা গেছে। একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকাযর জন্য তারা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। এমতাবস্থায় আমরা কি তাদেরকে গ্রহণ করে নেবো?
যুগ-প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমার ব্যক্তিগত মতামত এখানে ভিন্ন। জামায়াতে ইসলামী যে-ধারায় রাজনীতি করে সেটি কখনো স্বস্তিকির ছিল না। আজকে বা আগামীতেও এই রাজনীতিকে স্বস্তিকর ভাবা সম্ভব নয়। ধর্মীয় উগ্রবাদের চাষাবাদে বহাল থেকে ক্ষমতাচর্চার রাজনীতি শুভ হতে পারে না। জামায়াত গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু তাদের রাজনৈতিক কনটেক্সেট বিবেচনায় সেটি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না। এমন এক শাসন কায়েম করা তাদের মৌল উদ্দেশ্য যেটি যুগানুকূল নয়। ইরানের মতো বিপ্লবী রাষ্ট্র গঠন ও অনুরূপ কোনো শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য। এখন ইরান কি ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে ভালো অবস্থায় আছে? বিশ্বে এই মুহূর্তে খোমেনিছকে শাসিত রাষ্ট্রের যুগান্তকারী কেনো অবদান কি আমরা দৃশ্যমান দেখছি?
এসব প্রশ্নের উত্তর কি জামায়াত বা তার অনুসারীদের কাছে আছে? বাংলাদেশে ইরানি স্টাইলে রাষ্ট্রগঠন বিশ্ব থেকে দেশকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। মৌলিক অধিকারের মাপকাঠি তখন বদলে যাবে। শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে গুরুতর পরিবর্তন ঘটবে। মুক্তচিন্তার জায়গা বলে কিছুর অস্তিত্ব থাকবে বলে আমার মনে হয় না। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়তো ঘটবে, কিন্তু মানসিক দৈন্য চরম আকার ধারণ করায় সেই উন্নতিকে তখন অনেকেই অসার হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইবেন। মনের সকল দুয়ার রুদ্ধ হয়ে যাবে। আমাদের জন্য যা হবে বিভীষিকার নামান্তর।
. . .
যৌক্তিক বিশ্লেষণ জাভেদ। তর্কের খাতিরে আপনার বক্তব্য হইতে কিছু পয়েন্ট ও জিজ্ঞাসা এক-এক করে তুলতে চাই…
ক.. আপনি লিখছেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে ভারত কি এই কাজ করেছে? ভারত না হয়ে অন্য কোন রাষ্ট্র হলেও কি সেটা করত না?’ নিশ্চয়, জনআকাঙ্ক্ষার জায়গা হইতে ভারতের সাহায্য জরুরি ছিল। সমস্যা সেখানে না। ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্র একাত্তরের ঘটনাকে দুই রাষ্ট্রের মধ্যকার বৈরিতা বা শোধ উধারের জায়গা হইতে ব্যাখ্যা করে। একাত্তর প্রশ্নে এখন পর্যন্ত যত বয়ান তারা তৈরি করছে, খেয়াল করলে দেখবেন, বাংলাদেশ সেখানে কেবলই এক ভূখণ্ড! পাকিস্তান বিশ্বাস করে, ভারত এই অস্থিরতা ও ভাঙনের পেছনে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় সংস্করণে একাত্তর হইতেছে এমন ঘটনা যেখানে তাদের অনুপ্রবেশ পাকিস্তানের অখণ্ডতাকে প্রথমবারের মতো বিপন্ন করতে সফল হইছিল।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্ম নেওয়ার যে-পটভূমি আমি-আপনি সম্যক জানি-বুঝি, ভারতসৃষ্ট বয়ানে তো তার কোনো চিহ্নই আপনি পাইতেছেন না! বাহান্ন হইতে একাত্তরে সৃষ্ট পটভূমিকে তারা নির্ধারক হিসেবে গণ্য করে না। এই-যে করে না, বাংলাদেশের পক্ষ হইতে সেইটা নিয়া কিন্তু ভারতকে আমরা কোনো বার্তা দিতে পারি নাই। তাদের বয়ানে পটভূমির সংযুক্তি বা এর তাৎপর্য যোগ করার ম্যাসেজ কেন দিতে পারি নাই? ফলে যা হইছে, ভারত তার নিজস্ব ছকে বাংলাদেশকে নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান, এমনকি শ্রীলঙ্কার মতো ব্যবহারের মতলবকে বিদেশনীতি বইলা বুঝে। আওয়ামীরা যেখানে বরাবর তার তুরুপের তাস। ফলত ভারতবিরোধী (এবং এখন বিদ্বেষী) রাজনীতির বাতাবরণ জারি থাকতেছে। বাণিজ্য বৈষম্যসহ জলবণ্টন এবং আরো অনেকানেক ইস্যু নিয়া আমরা সফল দূতিয়ালী করতে না পারার পেছনে একাত্তর ফ্যাক্টর হইতে থাকে। সাহায্য মানে কি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতায় বিগলিত থাকতে হবে আজীবন? এইবার দ্বিতীয় পয়েন্টে আসি…
খ.. জামায়াত কতটা কী ক্ষতিকর এইটা কিন্তু পৃথক আলোচনা। যে-কোনো ভাবাদর্শে কেন্দ্রীভূত রাজনীতিই বিপজ্জনক। এই জায়গা থেকে যদি ভাবেন, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র… সকলই এক বরাবর। পৃথিবীর ইতিহাসে মানবসৃষ্ট হেন ভাবাদর্শ নাই যেইটা বিপদের শঙ্কামুক্ত। যে-জায়গা হইতে আমি-আপনি ধর্মতন্ত্রকে ক্ষতিকর গণ্য করতেছি, একই জায়গা হইতে নাস্তিকতায় কেন্দ্রীভূত ভাবাদর্শিক রাজনীতি অথবা ধরেন আমাদের এখানে আওয়ামীসৃষ্ট মুজিববাদ সমান ক্ষতিকর প্রমাণিত হইতেছে। জিয়াবাদ বইলা যদি কিছু থাকে তাইলে সেইটাও একই পরিণতির দিকে ধাবিত হইতে বাধ্য। সুতরাং ভাবাদর্শকে রাষ্ট্র গঠনে আপনি কোনোভাবে কেন্দ্রীভূত গণ্য করতে পারেন না। এইটা ক্ষতিকর ছিল, ক্ষতিকর আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
আপনি এখন কী করবেন? আপাত বাঁচার পথ খুঁজতে গণতন্ত্রে যাইতে হইতেছে আপনাকে। গণতন্ত্রও সমান ক্ষতিকর, যদি না আপনি জাতিকে গণতান্ত্রিক আচরণে সচেতন ও অভ্যস্ত করতে বিফল হইতে থাকেন। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রগঠন কেন এবং কীভাবে নৈরাজ্য ও নির্বুদ্ধিতা ইত্যাদি নিয়া প্লেটো তাঁর রিপাবলিক-এ এবং অ্যারিস্টোটল পলিটিক্স-এ ব্যাখ্যার কোনো খামতি রাখেন নাই। পরিস্থিতি এমন, সভ্যতাকে আমি-আপনি এমন এক জায়গায় নিয়া আসছি, অগতির গতি রূপে গণতন্ত্রকে মন্দের ভালো বইলা সকলে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হইতেছেন। এখানে আবার ঝামেলা, কোন গণতন্ত্র? ইউরোপ-আমেরিকা যেইটা চালাইতেছে… সেইটা? নাকি দেশভেদে তার স্বরূপ ভিন্ন হওয়া উচিত। যদি হয় তাইলে কেমন ইত্যাদি।
তো এখান থেকে আসেন বাংলাদেশে। দেশভাগের কাণ্ডারি দ্বিজাতি তত্ত্ব ভাবাদর্শ হিসেবে খতরনাক ছিল, যেহেতু ওইটা ধর্মকে পুঁজি করে রেডক্লিফ সায়েবের ঘাড়ে অখণ্ড ভারতবর্ষের মানচিত্র ভাগাভাগির দায়িত্ব অর্পণ করছিল। জিন্নাহ তো ইংরেজ কেতায় সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন আগাগোড়া। পাকিস্তান জন্ম নেওয়ার পর উনার স্পিচ লক্ষ্য করেন। ওইটা একইঅঙ্গে সেকুলার ও গণতান্ত্রিক ছিল। পাকিস্তানকে সে-আদলে সাজানোর মতলব ছিল তাঁর। মিলিটারি সেখানে ভূমিকা নিতে শুরু করায় কাজটা করতে পারেন নাই। আয়ুও খতম হইছিল আকস্মিক।
তারপর থেকে পাকিস্তানে ধর্মীয় ইস্যুকে ব্যবহার করে রাজনীতির ভাবনা কিন্তু জিয়াউল হকের আগে পর্যন্ত তীব্র হইতে পারে নাই। ইয়াহিয়া একাত্তর প্রশ্নে ধর্মকে সামনে আনছিল ভারতকে কাউন্টার দিতে। ভুট্টো পর্যন্ত পাকিস্তানে দেখা দেওয়া রেজিম মিলিটারির ছত্রছায়ায় লিবারেলিজমের পথেই ছিল। সমস্যা একটাই ছিল সেখানে,- মিলিটারির ছায়ায় সামন্তপ্রথার আদলে ভোগবাদি সমাজ উনারা জন্ম দিতে বাধ্য ছিলেন। ভুট্টোকে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য শাসক গণ্য করা যাইতে পারে, যার হাত ধরে পাকিস্তানে পরিবারতন্ত্রের জন্ম হয়। ভুট্টো পরিবারকে পরে এর জন্য চড়া মাশুল গুনতে হইছে। যে-কারণে জিয়াউল আসার সযোগ পাইলেন সহসা।
এসব সত্ত্বেও মুসলিম লীগের দ্রুত পতন ঘটতেছিল সেখানে। জামায়াত পাত্তাই পায়নি তখন। জিয়াউল হক আসলেন এবং ইসলামিক ছাঁচে রাষ্ট্র গঠনের অভিসন্ধিতে হাত দিলেন। মানে দাঁড়াইল, সামরিক শাসনের ছাঁচ ধর্মকে গুঁটি হিসেবে পুনরায় সামনে নিয়া আসলেন জিয়া। পরবর্তী ইতিহাস সকলের জানা। ইমরান খানের আগে অবধি কারো পক্ষে পুনরায় অতীত ধারায় ফেরত যাওয়া সম্ভব হয় নাই। আফগানিস্তান সেখানে ইস্যু ছিল। মার্কিনিরা প্রবলভাবে মিলিটারি ও রিলিজিয়াস পলিটিক্সকে পেট্রোনাইজ করছে। তো এসবের জন্য ধর্মকে কি এখন আপনি দুষবেন? ধর্মতন্ত্রকে হটানোর পলিটিক্সে আপনি যাইতে পারেন নাই, সমস্যা সেখানে। আমার প্রশ্ন, মুজিব কেন পারলেন না? কেন অরাজকতার নিষ্পত্তি খুঁজতে উনাকে নিয়ন্ত্রিত একদলীয় শাসনে যাওয়ার ভাবনা ভাবতে হইল? উনি তাইলে কোন জায়গায় হইতে গণতান্ত্রিক বা উনার নিজ ছাঁচে সমাজতান্ত্রিক ছিলেন?
. . .
আদি নেটালাপ : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪ এখানে সমাপ্ত হইতেছে। আলাপের দ্বিতীয় অংশ (সেপ্টেম্বর ২৪) পরবর্তী পোস্টে সংকলিত হবে।
. . .