. . .
নিয়াজ মোরশেদ ও রানী হামিদ… এই দুইজন একসময় দাবায় আমাদের গর্বের ধন ছিলেন। নিয়াজ সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম গ্রান্ডমাস্টার হইছিলেন। কাজী মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের মতো ব্যক্তিত্ব কিশোর নিয়াজের সঙ্গে দাবা খেলে আনন্দ পাইতেন। সিলেটি কন্যা রানী হামিদও দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ভীষণ পরিচিত মুখ ছিলেন একসময়। আশির উপ্রে বয়স চলছে উনার। দাবাড়ু মস্তিষ্ক আজো অটুট ও ক্ষুরধার। নিছক আনন্দের জন্য দাবাটা খেলেন ইদানীং। হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত দাবা অলিম্পিয়াডে টানা ছয় ম্যাচ ধরে অপরাজিত রানী হামিদ। আপাত শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনার তরুণ দাবাড়ুকে পরাস্ত করেছেন। এখনো কোনো ম্যাচ হারেননি।
উনার ছেলে ফুটবলশিল্পী কায়সার হামিদ নামকরা ডিফেন্ডার ছিলেন। মোহামেডানের হয়ে খেলতেন ওইসময়। সালাহউদ্দিন, এনায়েত, চুন্নু, আসলাম, সালাম মুর্শিদী, সাব্বির এবং পরে মোনেম মুন্নার মতো কায়সার হামিদও তারকা খেলোয়াড় ছিলেন। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ দেশের ফুটবলে ক্রেজ ছিল তখন। ঘরোয়া লিগে আকাশনীল ও সাদাকালো শিবিরের ম্যাচ মানেই মস্ত ঘটনা! ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে এখন যে-উত্তাপ ছড়ায়, ওই সময় আবাহনী ও মোহামেডানের ম্যাচে সেই তাপ টের পাইত সারা দেশ। তার সঙ্গে ছিল মজাদার রেডিও কমেন্ট্রি, যেখানে আবেগের চোটে ধারাভাষ্যকারের মেঘাচ্ছন্ন মাঠ ও কর্দমাক্ত আকাশ বইলা ফেলাটা ব্যাপার না টাইপের ঘটনা ছিল। ফুটবল ছিল নিখাদ বিনোদন। সেইটা যেমন দেশে, পুরাদস্তুর পেশাদার ফুটবল খেলে অভ্যস্ত ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বিলিয়ন ডলার ফুটবল ইন্ড্রাস্টিও তার বাইরে ছিল না।
দিয়েগো মারাদোনা, কার্লোস ভালদেরামা, রেনে হিগুইতা, রুড খুলিত, মার্কো ফন বাস্তেন, পাওলো মালদিনি, রবার্তো বেজিও, একঝাঁক ব্রাজিলীয় তারকাভরা… ওই জিকো-সক্রেটিস থেকে রোমারিওর মতো ধ্রুপদি ফুটবলশিল্পী শাসিত বিশ্বে ফুটবলটা কেবল ছকবাঁধা গতি আর স্কিলের পরাকাষ্ঠা ছিল না। গতি-স্কিল-ট্যাকটিকস ষোলআনার উপ্রে আটারো আনা তখনো ছিল। তার ফাঁক গলে বলে লাথালাথিটা মজাক ও বিনোদনে মোড় নিতো হামেশা। । মারাদোনার পাগলামিতে ছিল জাদু, আর হিগুইতা যা করত, এখন সেইটা এমিলিয়ানো মার্তিনেসের মতো গোলকিপারের পক্ষেও করে দেখানো সম্ভব না। কারণ, খেলার ছক পুরোপুরি পাল্টে গেছে।
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের দিন দুই ক্লাবের পতাকায় ছেয়ে যেত পাড়া-মহল্লা। তো সেই কায়সার হামিদ সম্ভবত বিএনপি না জাতীয় পার্টি ঘরানার রাজনীতিতে যুক্ত। হাসিনাপতনের পর গণভবন অথবা সংসদ ভবনে তিনিও ঢুকছিলেন। পরে একখানা ল্যাপটপ হাতে বিজয়-উল্লাস করতে-করতে বাহির হওয়ার ছবি কোথায় জানি দেখছিলাম! ব্যাপার না! নগর পুড়লে দেবালয় বাদ যায় না। রানী হামিদ ওসব সংকীর্ণতার অনেক ঊর্ধ্বে বিচরণ করেন। দেশ উনাকে সম্মান দিতে কৃপণতা করছে। হাসিনা রেজিমে উনার কোনো অস্তিত্ব টের পাই নাই। এতে অবশ্য রানী হামিদের সম্মানহানী ঘটেনি একটুও। উনি তখনো মগ্ন দাবাড়ু ছিলেন। এখনো সমান। দেশের এই বর্ষীয়ান দাবারত্নকে তাঁর অর্জনের জন্য স্যালুট।
. . .
. . .