সমাজ ও অর্থনীতির চালক হিসেবে বণিকনির্ভর সুগঠিত বুর্জোয়া শ্রেণি পাকিস্তান ও বাংলাদেশে গড়ে না উঠায় এখানকারর শ্রেণিশোষণের ছক বা এর বিরুদ্ধে লড়াই সর্বদা ঘোলাটেই থেকে গেছে। হাসিনা আমলে ব্যবসায়ীদের দাপট আমরা দেখেছি, তবে খেয়াল করা প্রয়োজন,—ব্যবসায়ী শ্রেণিটি সেখানে মার্কসকথিত পুঁজবাদী শক্তিতে নিজেকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম ছিল না। সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রকে নেপথ্য চালিকাশক্তি মেনে নিয়ে তারা কেবল লুম্পেনে পরিণত করেছে নিজেকে। আর গেল তিরিশ বছরের ছকে এই অলিগার্কিকে পূর্ণতা দিতে মোল্লারা যুক্ত হয়েছেন। আলভীর অতি উন্নত রাষ্ট্রের পরিহাসকে যেটি বাংলাদেশে সত্য প্রমাণ করছে।
-
-
এরশাদকে নিয়ে প্রশ্নটি অগত্যা তোলাই যায়,—তিনি কি একালের অনেক শাসকের মতো কর্তৃত্ববাদী? কর্তৃত্ববাদের নতুন যে-স্বরূপ বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে আমরা কমবেশি ব্যাপক হতে দেখছি, এখন এর সঙ্গে তাঁর আমলে দেখা দেওয়া কর্তৃত্ববাদকে অভিন্ন ভাবা কি সম্ভব? ক্ষমতা ও রাজনৈতিক অস্তিত্বের প্রশ্নে বিরোধীকে দমনের অপকৌশল আর নিজের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে তাকে নিস্তেজ করে ফেলার মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। এরশাদকে এদিক থেকে যে-পরিমাণ কৌতুককর দেখায়, সমপরিমাণ আগ্রাসী তিনি হতে পেরেছিলেন কি?
-
সত্য নগ্ন ও খোলামেলা থাকুক,—এটি আমাদের চাওয়া। বাকস্বাধীনতার নাম করে যদি সত্যকে অহরহ মিথ্যা পয়দার কাজে ব্যবহার করা হয়, তাকে সবসময় প্রতিহত করা সম্ভব নাও হতে পারে। বাংলাদেশকে যার সেরা উদাহরণ গণ্য করা যেতে পারে। আমাদের সমাজ আগাগোড়া লাই ম্যাট্রিক্সের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সত্যকে যেখানে অজস্র মিথ্যার সাহায্যে অবলীলায় বদলে ফেলা যায়, এবং মানুষ তা বিশ্বাস করে। এর পেছনে সক্রিয় রাজনীতিতে পরিবর্তন না এলে জন স্টুয়ার্ট মিলের অন লিবার্টি আমাদের জন্য খামোখা।
-
নৈরাশ্যের অন্তিম পরিণতি নিস্পৃহতায়। নিস্পৃহতার পরিণতি তাহলে কী? নির্বিকার কোনো অবশ অভ্যাসে মন্দিরে পৌঁছানো? নাকি নির্বেদে সমাধি গ্রহণ? কবি এর কোনোটাই বেছে নিচ্ছেন না এখানে। তিনি বেঁচে আছেন স্মৃতিমধ্যে। দেহটা সক্রিয় রোমন্থনের ভিতর। যদিও সেই রোমন্থনের ব্যাপারে আবেগ ফিকে হয়ে এসেছে। কোনো বক্তব্য রাখার প্রয়োজন নেই, তথাপি অভীপ্সা রয়েছে। কেন রয়েছে? উত্তর কি জানে মানুষ? পাঠকরা কি জানে? না,—কেউ তা জানে না।
-
বাংলাদেশের সীমানা ও সার্বভৌমত্ব অটুট থাকুক, এটি আমাদের একমাত্র চাওয়া। আমাদের বিদেশনীতির মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটুক, কোনো ব্লকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে কৌশলী হয়ে উঠুক এই নীতি;—ছোট্ট দেশটির জন্য এটুকু যথেষ্ট। কিন্তু পরিস্থিতি সেরকম কি? শেখ হাসিনার ওপর অতিমাত্রায় ভারত নির্ভরতার অভিযোগ ছিল। ইউনূস কার ওপর নির্ভর করছেন সে এক খোদা জানে! কমলা হ্যারিস ইলেকশনে ডাব্বা মেরে তাঁকে বড়ো বিপাকে ফেলে দিয়েছেন। মার্কিন সরকার আর জর্জ সোরসের পোষা খেলনাটি বোধহয় নিজের গন্তব্য ঠার করতে পারছেন না। এসব কার্যকারণে ভারত যদি হাসিনাকে বংলাদেশে পুনর্বাসিত করার ছক কষে থাকে, যাকে আমরা গুজব ধরে নিচ্ছি আপাতত,—আখেরে সেটি ঘটলে অবাক হওয়ার কারণ থাকবে না।